- এনসিপির জন্ম স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়া: নাহিদ ইসলাম
- এই সংবিধান ভেঙেচুরে নতুন সংবিধান চাইতে এসেছি: সারজিস
- এনসিপির কর্মীদের চোখ রাঙালে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ
- বাংলার ইয়াজিদ শেখ হাসিনার বিচারের আগে রাজপথ ছাড়ব না: সামান্তা শারমিন
- নাগরিকের স্বাস্থ্যতথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে: তাসনিম জারা
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশ-এর রূপরেখা প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রোববার বিকেল ৫টার পর সমাবেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় এই রূপরেখা।
সমাবেশে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপির জন্ম হয়েছে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। নতুন সংবিধানের কথা উল্লেখ করে দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা মুজিববাদী সংবিধান ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়ে নতুন সংবিধান চাইতে এসেছি। দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এনসিপির কর্মীদের কেউ যদি চোখ রাঙায় এবং হুমকি দেয়, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরশাসনের বিচারের কথা উল্লেখ করে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, বাংলার ইয়াজিদ শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে।
জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের স্বাস্থ্য তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে। এদিকে, শহিদ মিনারে গতকাল বিকেল ৪টায় এনসিপির সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয় বিকেল ৫টার পর। দলটির নেতাকর্মীরা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা কিছু জটিলতার কারণে সমাবেশস্থলে পৌঁছতে না পারায় বিলম্ব হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপির জন্ম এবং সকল শ্রম আপনাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ, প্রত্যাশা আমাদের ভাবনাকে করেছে গভীর, আমাদের লক্ষ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই ঠিক এক বছর পর আমরা আবার শহিদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে।
দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাহাত্তরের সংবিধান ছিল একটা দলের। যে সংবিধান আরেকটা দেশ থেকে পাস হয়ে এসেছে। এই মুজিববাদী সংবিধান আর বাংলাদেশে থাকতে দিতে পারি না। আমরা আজ (গতকাল) এই মঞ্চে মুজিববাদী সংবিধান ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়ে নতুন সংবিধান চাইতে এসেছি।
তিনি বলেন, ২৩ বছরে পাকিস্তান শাসনে ছিলাম, অধিকার পাইনি। ৫৪ বছরে দেশেও অধিকার পাইনি। এক বছর আগে আমরা এই শহিদ মিনারে ছিলাম। এই দিনে হাসিনার পতনের ডাক এসেছিল। এক বছর হয়ে গেছে, আজও আমাদের অধিকার পাইনি। আমরা আর হতাশার কথা শুনতে চাই না। এক বছর আগে এই শহিদ মিনারে যারা ছিল, তাদের অনেকে আজ শহিদ। তাদের পরিবার এখানে আছেন। আমরা এই শহিদ ভাইদের হত্যার বিচার চাইতে এসেছি।
এনসিপির কর্মীদের কেউ যদি চোখ রাঙায় এবং হুমকি দেয়, তাহলে এখন থেকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে এসেছি। এ এক বছর আমরা শুধু কথা বলে গেছি, এখন সময় কাজের। আমাদের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা তা বাস্তবায়ন করব। প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকব। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি, এলাকায় এলাকায় এনসিপির কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন, এখন থেকে রূপসা থেকে পাথুরিয়া-এনসিপির কোনো কর্মীর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমরা রাজনৈতিকভাবে তার জবাব দেব। কোনো হুমকি-ধমকিতে আমরা পিছিয়ে যাব না।
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ উল্লেখ করে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। এই ইয়াজিদ শেখ হাসিনার বিচার জনগণের আদালতে হবেই। আমরা মাঠ ছাড়ি নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই। ইনশাল্লাহ ছাড়ব না।’
তিনি আরও বলেন, আমরা আজ যুদ্ধের প্রস্তুতির ডাক নিয়ে এসেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিÑ সব জায়গায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই, এই রাষ্ট্র ও রাজনীতির কাঠামো পাল্টাতে হবে।
জনস্বাস্থ্যে এনসিপি বিশেষ গুরুত্ব দেবে জানিয়ে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের স্বাস্থ্যতথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, জুলাই পদযাত্রায় গত মাসে দেশের প্রায় প্রত্যেকটা জেলায় আমরা গিয়েছি। আপনারা আপনাদের সমস্যার কথা বলেছেন। আমাদের রাজনীতি আপনাদের সমস্যা সমাধানের রাজনীতি। আমরা এমন চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তুলব যেন কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত না হয়।
এদিকে, নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা উপস্থাপন করতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গতকাল বিকেল ৪টায় সমাবেশ শুরুর কথা ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, এদিন বিকেল ৫টায়ও আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি তারা। দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীর্ষ নেতারা কিছু জটিলতার কারণে সমাবেশস্থলে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছতে না পারায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু না হলেও গতকাল বিকেল ৩টার পর থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা।