মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শামছুল আলম সেলিম

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

জুলাই চেতনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে

শামছুল আলম সেলিম

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও তা শেষ পর্যন্ত এক দফায় গিয়ে দাঁড়ায়। সব বৈষম্য দূর করে একটা সুখী, সমৃদ্ধশালী, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ছিল সবার। তার পরিপ্রেক্ষিতে দল-মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম আমরা। কিন্তু শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়া পরবর্তী সময়ে সবাই একত্রিতভাবে কাজ করে গেলেও বিভিন্ন সংস্কারের বিষয় যখন সামনে চলে এলো, তখন আমাদের মতানৈক্য প্রকাশ্যে এলো। 

জুলাই আন্দোলনে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করল তাদের একটা অংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে রাজনৈতিক দল গঠন করল। এই রাজনৈতিক দলকে অনেকে কিংস পার্টি বলে মন্তব্য করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে সরকার থেকে যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আন্দোলনের অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য দলে চেইন অব কমান্ডের ঘাটতি দেখা গেল। কেন্দ্র থেকে কড়া হুঁশিয়ারির পরও তারা চাঁদাবাজি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ল। বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন হলেও এখন অনেক ক্ষেত্রেই নতুন করে বৈষম্যের তৈরি হয়েছে। জুলাই পরবর্তী সময়ে বিশেষ বিশেষ জায়গায় বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে পদায়ন করা হলো। পদায়নটা এমনভাবে হলো- দেখা যাচ্ছে একটা বিশেষ গোষ্ঠী যারা আন্দোলনে ভালো ভূমিকা নেয়নি, তারা মধু খাচ্ছে। আর যারা আন্দোলনে আহত-নিহত হলো, তাদের ঠিকমতো সহয়তাও করা হয়নি। এখনো তারা কান্না করছে। আহতরা স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতার জন্য রাজপথে মিছিল করছে।

উদাহরণস্বরূপ যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি, এখানে শহিদ পরিবারের সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অনেক শহিদ পরিবার বলছে, এনসিপি ও সরকার তাদের এখন কোনো খোঁজ নিচ্ছে না। ফলে সার্বিকভাবে জুলাই নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা চলে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ধরনের ঐক্য দরকার ছিল, তা লোপ হয়ে গেছে। 

সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে সেখানেও দেখা গেছে অনেক সমস্যা। কিছু বিষয়ে দেখা গেছে রাজনৈতিক ঐক্যমত আছে, আবার কিছু বিষয়ে দেখা গেছে ঐক্যমত নেই। এই সুযোগে ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। এনসিপি যখন গোপালগঞ্জে সমাবেশ করতে গেল, তাদের যে ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছিল, সেই নেতাদের অপমানজনকভাবে গোপালগঞ্জ থেকে ফিরতে হয়েছে। সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানের ভেতরে করে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের ফেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুরবস্থার লক্ষণ। এতে জনগণ হতাশ। 

সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করলে কিছু বিষয়ে বর্তমান সরকার সাফল্য লাভ করলেও আইনশৃঙ্খলা এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের একটা অংশ আগামী সংসদ নির্বাচনের সময়ক্ষণ প্রলম্বিত হচ্ছে। মানুষের মূল আকাক্সক্ষা ছিল স্বাধীনভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, ভোট  দেবে। কিন্তু সেই বহুলপ্রতীক্ষিত ভোটের সময় এখনো জানানো হয়নি। সংস্কারের নামে নানাবিধ শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? সবাই আশা করছি, আজ জুলাই সনদ নিয়ে যে বিশাল অনুষ্ঠান হবে, সেখানে নির্বাচন নিয়ে একটা ভালো ঘোষণা আসবে। নির্বাচন হলেই আমরা বিশাল সংকটজনক অবস্থান থেকে উত্তরণ হতে পারব। 

ফ্যাসিস্ট শক্তির এখন আস্ফলন ঘটছে। ঢাকার বুকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সামরিক বাহিনীর দু-একজন যেখানে জড়িত থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। এগুলো আশঙ্কার বিষয়। তাই আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলেই সম্ভব সামনে এগিয়ে যাওয়া। আর যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, তাহলে ফ্যাসিস্ট শক্তি আবার ফিরে আসার পাঁয়তারা করবে। এটা কারো জন্য ভালো হবে না।

রাজনীতিতে সবার মধ্যে মতপ্রার্থক্য থাকবে। এটা দূর করতে হবে। গত রোববার যেমন রাজধানীতে দুটি রাজনৈতিক দল এনসিপি ও বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদর বিশাল সমাবেশ করল, তা খুবই সুন্দর হয়েছে। এখানে একে অপরকে ছাড় দিয়েছে। এই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকলে গণতন্ত্র ঠিকবে না।

আমাদের জুলাই চেতনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। আমি নিজে সেই অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক। কিন্তু অনুষ্ঠানে আমরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের তেমন একটা উপস্থিতি পাইনি। তার মানে জুলাই চেতনা সাধারণের মন থেকে মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তাই জুলাই চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। 

লেখক: অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Shera Lather
Link copied!