জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা, অন্যতম শীর্ষ সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আওয়ামী সরকার পতনের এক দফা দাবি বাস্তবায়নে যিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আন্দোলনে নেত্বতৃ দেওয়ায় গুম ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ডিবি হেফাজতেও নেওয়া হয়েছিল তাকে।
একটি সফল অভ্যুত্থান সংঘটনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টার পদ পদত্যাগ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর, দেশে কী পরিবর্তন হয়েছে এবং গণমানুষের স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে, এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশের মুখোমুখি হন নাহিদ ইসলাম।
রূপালী বাংলাদেশ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর কী ধরনের পরিবর্তন দেখছেন?
নাহিদ ইসলাম: ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান এ প্রজন্মের আত্মচেতনার জাগরণ। এটা শুধু সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল একদল তরুণ-তরুণীর বিবেকের ডাকে সাড়া দেওয়ার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই অভ্যুত্থান স্বপ্ন দেখিয়েছে, নতুন বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে তোলার। তবে গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর যে স্বপ্ন ছিল আমাদের, সে স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। যারা অভ্যুত্থান সফল করেছিল, তারা এখনো জাগ্রত ও রাজপথে আছে। আমরা দখলদারিত্ব চাইনি। বাংলাদেশে দখলদারিত্ব ও পুরোনো সন্ত্রাসের রাজত্ব ফিরে আসতে দেব না। আমরা এখনো আগের বন্দোবস্তের পতন ঘটাতে পারিনি, নতুন সংবিধান তৈরি করতে পারিনি, ক্ষমতার দুর্নীতিপরায়ণ স্তম্ভ ও সামরিক-প্রশাসনিক কাঠামো ভাঙতে পারিনি। সর্বোপরি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
রূপালী বাংলাদেশ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, এর মাধ্যমে জনগণের স্বপ্নপূরণ হবে বলে কি মনে করেন?
নাহিদ ইসলাম: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন এক বাংলাদেশের জন্য জনআকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল। গণমানুষ যে সামাজিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল, যে অর্থনৈতিক মুক্তির আশা করেছিল, তাদের ভাগ্যের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন কামনা করেছে সাধারণ মানুষের এসব স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে আশা-আকাক্সক্ষার বীজ বুনেছে সাধারণ মানুষ তা এগিয়ে নিতেই কাজ করবে আমাদের নতুন এ রাজনৈতিক দল। গণঅভ্যুত্থান যেন শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের বা রেজিম পরিবর্তনের আন্দোলনের ফল না হয়। বরং অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণমানুষের আকাক্সক্ষা পূরণে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়েই কাজ করব আমরা।
রূপালী বাংলাদেশ: অভ্যুত্থানের নতুন প্রেক্ষাপটে গঠিত এ রাজনৈতিক দল থেকে দেশের মানুষের জন্য কি বার্তা দিচ্ছেন?
নাহিদ ইসলাম: আমরা বলেছি, এমন একটি ব্যবস্থা করব, যেখানে স্বৈরতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারবে না। ২০২৪-এর আন্দোলন ছিল জনতার বিপুল গণবিস্ফোরণ। এটা হয়েছিল, তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে। বিগত সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে এটি ছিল পরিবর্তনের গণরায়। হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের নতুন স্বাধীনতা কেবল সরকার পরিবর্তনের জন্যই ঘটেনি। যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ কয়েম হয়, সে ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। ফ্যাসিবাদ পতনের বছরপূর্তিতে এ জুলাইয়ে আমরা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, জাফলং থেকে সুন্দরবন, বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-শ্রমিক-জনতা; আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা; চায়ের টং দোকান থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চা-শ্রমিক সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে, আমাদের শহিদ পরিবার আর আহত ভাই-বোনদের প্রত্যাশার কথা শুনেছি। তাদের নিত্যদিনের সংগ্রাম, আকাক্সক্ষা এবং স্বপ্নের কথা শুনেছি। এনসিপির জন্ম এবং আমাদের সব শ্রম দেশের জনগণের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                    -20251031020255.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন