বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘এই সরকার সাংবাদিকদের দাবিসহ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার এবং ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক সমাজের দাবি ছিল, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার, সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন এবং সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করা। কিন্তু সরকার সেই দাবি পূরণ করতে পারেনি। আমরা অবিলম্বে গণতন্ত্রের পূর্ণরূপ দেখতে চাই।’
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসানে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডিইউজে সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন এবং ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘দেশে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দৃশ্যমান সংস্কারেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ‘সংস্কারের মুলা’ ঝুলিয়ে তারা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করছে। জনগণ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার হারিয়েছে, সেটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার তালবাহানা করছে সরকার। এই ধরনের আচরণ ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। আমরা অবিলম্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের রূপরেখা দেখতে চাই।’
তথ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এক/এগারোর আলামত দেখতে পান, তাহলে এটা আপনার সরকারের ব্যর্থতা। সেই দিনই আপনার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। রাষ্ট্রীয় পদে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের বালখিল্যতা করা যায় না। এই দেশের মানুষ কখনোই ১/১১ হতে দেবে না।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তথ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এর তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সাংবাদিকদের অবদান স্মরণ করে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘৩ আগস্ট উত্তাল সময়ে আমরা রাজপথে হাজারের বেশি সাংবাদিক নিয়ে মিছিল করেছি। ৪ আগস্ট, যখন কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না, তখন আমরা ২ হাজারের বেশি সাংবাদিক ও পেশাজীবীকে নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছি।
তিনি বলেন, ‘সেই সময় আমাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। আমাদের প্রেস ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তখনকার দালাল গোষ্ঠী প্রেস ক্লাব চারদিক থেকে তালা মেরে রেখেছিল। তবুও আমরা দমে যাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৬৭ জন সাংবাদিক জীবন দিয়েছে। বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের সঙ্গে নোংরামি করছে। যাদের রাজপথে পাশে পাইনি, যাদের চিনি না, তাদের ‘জুলাই সাহসী সাংবাদিক’ বানিয়ে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পক্ষপাতদুষ্ট এই তালিকা সাংবাদিক সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে।’’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে, তবে চূড়ান্ত বিজয় আসেনি। ফ্যাসিবাদের বিচার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই হবে আমাদের পরিপূর্ণ বিজয়। নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান হচ্ছে কি না সেটি সতর্কভাবে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ‘জুলাই যোদ্ধা’দের নিয়ে যে বিতর্কিত তালিকা তৈরি করেছে, সেটি অনভিপ্রেত। বিপ্লবের চেতনা যেন আমাদের মাঝে থেকে হারিয়ে না যায়।
সীমান্ত হত্যা এখনও বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মন থেকে রাজনৈতিক দাসত্ব ও উপনিবেশবাদী চিন্তা-চেতনা বিলুপ্ত করতে হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল এখনো বন্ধ হলো না কেন?’
ডিইউজে সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের উপেক্ষা করে এক ব্যক্তির পরামর্শে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এখন আত্মীয়-স্বজনদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।’
ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকার সাংবাদিকবান্ধব নয়। এক বছরে আমাদের কোনো দাবি বাস্তবায়ন করেনি। বরং সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রকৃত সাংবাদিকদের অসম্মান করা হচ্ছে।’
ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালের কণ্ঠের যুগ্ম সম্পাদক সাঈদ খান বলেন, ‘‘আমরা এখনো দুঃশাসন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। সাংবাদিকরা এখনো অপমান ও কষ্ট সহ্য করছে। সম্প্রতি কল্যাণ ট্রাস্ট যে ‘জুলাই সাহসী সাংবাদিক’ তালিকা করেছে, আমি তা প্রত্যাখ্যান করছি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘আবেদন করে সাহসী সাংবাদিক তালিকা হয় কীভাবে? বিশ্বে এমন নজির আছে বলে জানা নেই। এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম আমরা মানি না। ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো প্রশাসন ও গণমাধ্যমে ঘাপটি মেরে আছে। এদের চিহ্নিত করে দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে, না হলে এরা আবার ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনবে।’

 
                             
                                    



 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন