বাজার করতে গিয়ে ইলিশ কেনা এখন যেন বিলাসিতা। শ্রাবণের ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশের দাম অসহনীয়। তাই বাঙালির ঐতিহ্যের ইলিশ এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ইলিশের দাম আকাশছোঁয়াই বলা চলে। একসময়কার নিত্যদিনের ইলিশ এখন যেন শ্রেফ বিলাসি পণ্য! রাজধানী ঢাকার বাজারে এখন এক কেজি পরিমাপের একটি ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশের মৌসুম ধরা হয় জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এবার মৌসুম শুরু হলেও অধরা এই রুপালি মাছ।
অতিরিক্ত দামের কারণে ক্রেতারা ইলিশ বিক্রেতাদের দামই জিজ্ঞেস করেন না। ক্রেতারা জানান, বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার ইলিশের দাম অস্বাভাবিক পরিমাণ বেশি।
তবে ঢাকার আমদানিকারণ ও ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আড়তে কিনায় দাম বেশি, তাই বাড়তি দামে না বিক্রি না করলে পড়তা হবে না।’ অন্যদিকে মূল যোগানদাতা জেলেরা বলছেন, ‘নদীতে আগের মতো আর ইলিশ পাওয়া যায় না। গভীর সুমদ্রে গেলে তবেই কিছু পাওয়া যায়। যারা যায়, তাদের মধ্যেও অনেক ভয়। এ কারণে মোকামে ইলিশের ঘাটতি।’
প্রবল বর্ষণে সম্প্রতি দেশের নদ-নদীগুলোর মধ্যে চাঁদপুর ও বরিশালে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে ঢাকার বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবু এক কেজি পরিমাপের ইলিশ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও ছোট আকারের ইলিশের দাম একটু কমেছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছোট সাইজের ইলিশ এতদিন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। এখন একটু কমে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের ইলিশের দাম এতদিন ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। তা কমে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। তবে এক কেজি বা এক কেজির ওপরে ইলিশের দামও কমেছে। আগে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশের দাম কমলেও অন্যান্য মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। রুই-কাতলা সাইজভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, শিং ও মাগুর ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। শ্রাবণের ভরা মৌসুমে বোয়াল ও কোরাল ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ আর বাগদা চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
তবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ কম, চাঁদাবাজি ও ইলিশ আহরণে ডিজেলের দাম বেশি হওয়াকে দায়ী করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘এখন ইলিশের কেজি ২ হাজার টাকার ওপরে। দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ইলিশের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে উপদেষ্টা জানান, ‘সরবরাহ কম, এটা প্রধান কারণ। ঢাকায় ইলিশ এখনো সেভাবে আসছে না। আর চাঁদাবাজিও আছে, এটা এখনো বন্ধ করা যায়নি। অন্যদিকে ইলিশ আহরণে জেলে নৌকায় ব্যবহারে ডিজেলের দামও বেশি।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ইলিশের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। ঢাকায় এক কেজির কম ওজনের ইলিশ এখনো ২ হাজার টাকার বেশি। বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে আমরা আশা করছি। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বরিশাল ও চট্টগ্রামে তুলনামূলক ইলিশের দাম কম।’
দাম বাড়ার কারণে ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছে গ্রামবাংলার বা মধ্যবিত্তের মানুষ। বাজারে সরবরাহ থাকলেও দাম অনেক বেড়েছে।
এদিকে, এই অচলাবস্থার মধ্যেই ইলিশ চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন। গত ২৯ জুলাই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে ইলিশ চেয়ে চিঠি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’। তারা আগামী সেপ্টেম্বরের দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ আমদানি করতে চায়। যে চিঠি নিয়ে এখন পর্যালোচনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আপনার মতামত লিখুন :