শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম

ভিডিও করাই কাল হলো সাংবাদিক তুহিনের

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম

ভিডিও করাই কাল হলো সাংবাদিক তুহিনের

নিজ কর্মস্থল গাজীপুর মহানগরকেন্দ্রিক কোনো অনিয়ম বা অন্যায়ের বিষয়ে সদা সজাগ ছিলেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দেশি অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করেছিল গাজীপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। সেই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করায় জীবন দিতে হলো তাকে। ঘটনাস্থলের একটি দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে নিহতের বড় ভাই সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নগরের বাসন থানায় মামলাটি করেন। হত্যাকা-ে সন্দেহভাজন হিসেবে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে যাদের দেখা গেছে, তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে সাংবাদিক তুহিনের মরদেহ তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে মাগরিবের পর দাফন করা হয়। গতকাল শুক্রবার তুহিনের ময়নাতদন্ত শেষে বড় ভাই হোসেনের কাছে বুঝিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাদ জুমা গাজীপুর চৌরাস্তা ঈদগাহ মাঠে সাংবাদিক তুহিনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। গাজীপুরের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে হত্যাকা- সম্পর্কে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে কুপিয়ে হত্যার আগমুহূর্তের কিছু দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশি অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন আসাদুজ্জামান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন। নীল রঙের জামা পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন। নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তার সামনে গিয়ে গতি রোধ করেন ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। ঠিক সে সময় পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে কয়েক যুবক ওই ব্যক্তিকে কোপানোর চেষ্টা করেন। নীল শার্ট পরা ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান।

ঘটনার কিছু সময় আগে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন সাংবাদিক তুহিন ও তার সহকর্মী শামীম হোসেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামীম বলেন, চৌরাস্তা এলাকায় ছিলাম আমরা। এ সময় এক নারী ও পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যান। তখন কয়েকজন লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, এই পাইছি তোরে আয়।’ এ সময় তারা রামদা বের করলে ওই লোক দৌড় দেয়। তখন আমার পাশ থেকে তুহিন মোবাইল ফোন নিয়ে ওদের পেছনে দৌড় দেয়। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা হঠাৎ থেমে গিয়ে পেছনে তাকায়। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও চায়ের দোকানে ঢুকে ওকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে।’

অন্যদিকে নারীর সঙ্গে যেই ব্যক্তির ঝামেলা হয়েছিল, সেই বাদশা মিয়া আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাদশা মিয়া বলেন, ওই মেয়েসহ একটা টিম আছে, ওরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে।’ পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনিও তাদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরা হচ্ছে মিজান ওরফে কেটু মিজান, শাহ জামাল, বুলেট, অপর একজনের নাম সুজন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে তারা ছিনতাই করে থাকে। তবে এবার তারা ওই লোককে কেন কোপাতে গিয়েছিল, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, ওই মেয়েটিও ছিনতাইকারী দলের সদস্য। যে লোকটাকে ধাওয়া করেছে, তার সঙ্গে ছিনতাইকারীরা কিছু একটা করেছে, যার কারণে ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে ধাওয়া ও জখম করে। ঘটনার পর থেকেই পুলিশের একাধিক টিম হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান জানান, ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে মেয়েকে দিয়ে ট্র্যাপ করানো হতো। তারা বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে ট্র্যাপে ফেলে টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাত। এরকম কয়েকটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে কাজ করত। ঘটনার দিন বাদশা নামের এক লোককে ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করলে ওই লোক বুঝে ফেলে। পরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ওই নারীর সহযোগী আগে থেকে ওত পাতা পাঁচ-সাতজন ছেলে এসে ওই লোককে কোপাতে শুরু করে। এ সময় ওই লোক যখন দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, এ ঘটনা ওই সাংবাদিক তুলছিলেন। পরে তাকে চিনে ফেলে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!