সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের দাফন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নিজ বাড়ির পাশে সামাজিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল ক্ষণে ক্ষণেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। আহাজারি করে তিনি বলছেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।’
গতকাল শুক্রবার বাদ মাগরিব দ্বিতীয় জানাজা শেষে জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বাদ জুমা তুহিনের প্রথম জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হয় সাংবাদিক তুহিনের মরদেহ।
মাগরিবের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, এভাবে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তুহিনরা ৫ ভাই। প্রত্যেকেই কাজের তাগিদে সিলেট ও গাজীপুরে থাকেন। তারা কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তুহিন খুব ভালো ছেলে ছিল। নিয়মিত বাবা-মায়ের সেবা ও খোঁজখবর নিতেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় নাছির উদ্দিন নামে এক বাসিন্দা বলেন, তুহিনরা ৫ ভাই খুব ভালো ছিল। সবাই কাজের তাগিদে বাড়ির বাইরে থাকেন। একই এলাকার বাসিন্দা আক্রাম হোসেন বলেন, তুহিন সাংবাদিকতা পেশায় খুব ভালো করেছিল। অল্প সময়েই সে বেশ নাম-ডাক অর্জন করেছিল। তবে ৫ ভাইয়ের মধ্যে তুহিনের আয়-রোজগার বেশি ছিল। সে-ই সংসারের হাল ধরেছিল। এখন তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ে যাবে। সরকার যদি সহায়তা করে, তাহলে তুহিনের পরিবারের জন্য খুব ভালো হবে।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পত্তির ছেলে। তুহিন পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তার সংসারে দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলের নাম তৌকির (৭) ও ছোট ছেলের নাম ফাহিম (৩)।
সন্ত্রাসীদের হাতে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা তার গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়া আসতে শুরু করে।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের ৭৫ বছর বয়সি মা সাবিহা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে তুহিন কালকে (বুধবার) বলেছিল, আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাব। ডাক্তার অপারেশন করানোর কথা বললে, অপারেশন করাব। আম্মা কোনো চিন্তা করো না। তুমি ভালো হয়ে যাবে। বুক চাপড়ে আহাজারি করতে করতে এ কথা বলছিলেন তিনি।’ ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল ক্ষণে ক্ষণেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। আহাজারি করে তিনি বলছেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো। আমি খুনিদের বিচার চাই। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।’
বোন সাইদা আক্তার রত্ন বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমাদের খোঁজখবর নেয়। আমার ভাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।’
স্বজনরা জানান, আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আাল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০২ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স করে সেখানে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করে চাকরি ছেড়ে দেন।
আপনার মতামত লিখুন :