ঢাকসু নির্বাচন - পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, বাড়ছে উত্তাপ

• বর্ধিত দিনে মনোনয়ন নিলেন আরও ৯৩ জন, সর্বমোট ২৮ পদে মনোয়ন নিয়েছেন ৬৫৮ জন
• বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য এক দিন সময় বৃদ্ধি হয়নি : প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা
• ছাত্রদলকে ঠেকাতে ‘মব তৈরির’ অভিযোগ
• ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের প্রার্থিতা বাতিল চায় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় এক দিন বাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মত, ভিড়ের কারণে অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে না পারায় সময় বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল বর্ধিত সময়ে মনোনয়ন কেনার শেষদিন। এদিন মনোনয়ন কিনেছেন আরও ৯৩ জন প্রার্থী। সবমিলিয়ে ২৮ পদে ফরম নিয়েছেন ৬৫৮ জন। এদিকে মনোনয়ন বিক্রির সময় বাড়ানো, ‘মব’ সৃষ্টি করে ছাত্রদলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা, ছাত্রশিবিরের প্রার্থিতা বাতিল, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নির্বাচন নিয়ে ঢাবিতে বাড়ছে উত্তাপ। 

এদিকে মনোনয়ন বিক্রি শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, শেষ দিনে ডাকসু নির্বাচনের জন্য আরও ৯৩ জন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এ নিয়ে সর্বমোট ২৮ পদে ফরম নিয়েছেন ৬৫৮ জন। এর মধ্যে জমা পড়েছে ১০৬টি। তবে শেষ দিন হল সংসদের কতটি ফরম বিক্রি হয়েছে তা জানা যায়নি। গত সোমবার পর্যন্ত হল সংসদ নির্বাচনের জন্য মোট ১,২২৬ জন ফরম নিয়েছিলেন। বুধবার (আজ) মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন। তারপর জানা যাবে কোন পদে কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এদিকে মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদসহ কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। তারা বলছে, একটি ছাত্রসংগঠনকে বিশেষ সুবিধা দিতেই প্রশাসন সময় বাড়িয়েছে।

হঠাৎ করে একদিন সময় বাড়ানোকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রশাসনের পক্ষপাতী আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলে গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি এবং আজকে (গতকাল) তা জমা দিয়েছি। কিন্তু গতকাল থেকে কয়েকটি বিষয় দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ করে একদিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় বাড়াল। এটি স্পষ্টত একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি তাদের পক্ষপাতী আচরণ।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ করে প্রক্টর থেকে শুরু করে প্রভোস্ট ও বিভিন্ন কমিটির নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখছি। চব্বিশ-পরবর্তী সময়ে আমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন সাড়া চাই, যা সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান হবে। আগামীতে এ ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ চাই না।

একইসঙ্গে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রশাসনের ওপর চাপ’ তৈরির অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। গত সোমবার রাতে সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকালে ছাত্রদল আচরণবিধি মানেনি এবং প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে।

তবে সময় বাড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা এক দিন সময় বৃদ্ধি করিনি। আপনারা দেখেছেন, গতকাল (সোমবার) শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কেমন ছিল। ডাকসু তাদের অধিকার। সেই অধিকারটুকু যেন শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নিতে পারে, সে জন্যই আমরা এক দিন বাড়িয়েছি।

ছাত্রদলকে ঠেকাতে ‘মব তৈরির’ অভিযোগ: ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে ছাত্রদল যাতে মনোনয়নপত্র কিনতে না পারে সে জন্য ‘মব’ তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। 

তিনি বলেন, এই ডাকসু নির্বাচন, সেখানে যাতে ছাত্রদল মনোনয়নপত্র কিনতে না পারে সেজন্য মব তৈরি করে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে মব সৃষ্টি করা হলো। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রদল নেতারাও এই অভিযোগ তুলেন। 

এর আগে গতকাল দুপুরে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে রিজভী বলেন, হলের ‘নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের’ উপস্থিতিতে আগ্রহী প্রার্থীরা ফরম সংগ্রহ করতে পারেননি অভিযোগ করে ছাত্রদলের নেতারা ‘মবকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। তবে কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছেÑ তা স্পষ্ট করেননি সংগঠনটির নেতারা। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করেছে ডাকসুর নির্বাচন কমিশন।

ছাত্রশিবিরের প্রার্থী ও সিজার প্রার্থিতা বাতিল চায় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ: ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ। গতকাল সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম রানা জয় ও সালাহউদ্দিন আম্মার নিলয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যখন গঠনতন্ত্র সংশোধনী চাওয়া হয়েছিল তখন থেকেই আমরা বলে এসেছি ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যার দোসর, সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পর্কিত ও নিপীড়কদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না।