ঢাকা শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপচেষ্টা চলছে - বললেন তারেক রহমান 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৬:১৩ এএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পতিত আওয়ামী লীগের মতোই নতুন করে একটি গোষ্ঠী আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বিজয় ঠেকাতে অপকৌশল করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণ এক ফ্যাসিস্টের দুঃশাসন, অত্যাচার ও নির্যাতন দেখেছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হাজারও শহিদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে কংশরূপী ফ্যাসিস্টের কবল থেকে বাংলাদেশ এবং দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ মুক্ত হয়েছে। এই স্বৈরাচারের পতনের পর দেশে এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথ কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়।

তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য, মন্তব্য কিংবা নিত্যনতুন শর্ত বা শর্তের প্রস্তাবনা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছেÑ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারেÑ এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার ‘বিএনপির বিজয় ঠেকাও’ ধরনের অন্তর্ঘাতী অপরাজনীতি শুরু করেছিল। দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাও গত ১৬ বছরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা ছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এবার ক্ষমতাসীন সরকার নয়, বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সহযোদ্ধা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণেও সেই পলাতক স্বৈরাচার সরকারের মতো ‘বিএনপির বিজয় ঠেকাও’ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপির বিজয় ঠেকানোর এই অপরাজনীতি করতে গিয়েই বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্র এবং এক বিশাল জেলখানায় পরিণত করেছিল। এখন যারা মনে করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে আর সেই আশঙ্কা থেকে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা রকম অপকৌশল বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশে বলছি, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করুন। জনগণের শক্তির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ নির্ধারণ করে, তাহলে সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায় প্রদানের পথ রুদ্ধ করবেন না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি) নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। আমিও এর আগে সংক্ষেপে কিছু কথা বলেছি। আবারও সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে চাই। আমরা জানি, বিশ্বের অনেক দেশেই পিআর পদ্ধতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এখনো উপযোগী নয় বলেই আমরা কমবেশি মনে করি। জনগণের অধিকার রয়েছে জানারÑ তারা কাকে ভোট দিচ্ছে এবং কে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে যাচ্ছে। কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি নির্বাচিত করার সুযোগ না থাকায় জনগণ স্পষ্টভাবে জানতে পারছে না তারা কাকে সংসদে পাঠাচ্ছে। তাই জাতীয় সংসদ কিংবা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে অবশ্যই জনগণের মুখোমুখি হয়ে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। জনগণের রায় নিয়ে নির্বাচিত হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পিআর পদ্ধতি এবং আরও দু-একটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে, যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি ইস্যুই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরভাবে সমাধান হবে বা করা যাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যারা আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন, তারা হয়তো নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করছেন এবং একই সঙ্গে পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের পথ সুগম করছেন। যদি আমরা গণতন্ত্র উত্তরণের পথে একের পর এক শর্ত আরোপ করতে থাকি, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ধর্মীয় পরিচয়কে কেউ যেন নিজের হীন ও দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বিনীত আহ্বান জানাই। আমরা অতীতে দেখেছি, যারা নিজেদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বিবেচনা করেন, সেই সম্প্রদায়ের ওপর কিংবা তাদের ধর্মীয় স্থাপনা বা বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পেছনে অধিকাংশ সময়েই কোনো ধর্মীয় কারণ ছিল না। ব্যতিক্রম ছাড়া এসব হামলার পেছনে ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অথবা অবৈধ লোভ-লাভের আশার মতো কারণ। আমি বিশ্বাস করি এবং বিএনপি বিশ্বাস করে, ‘দল-মত-ধর্ম-দর্শন যার যার, রাষ্ট্র সবার’। ধর্ম যার যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।