ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুটিয়ে ব্যবসা করা কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানি এবার জরিমানার টাকা না দিতে শুরু করেছে টালবাহানা। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) দ্বারস্থ হয়েছে ১৭টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। জরিমানা না কেটে বকেয়া থাকা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা (প্রায়) প্রদানের আদেশ চেয়েছে কোম্পানিগুলো। এ লক্ষ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে কমিশন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে না পারায় চুক্তি অনুযায়ী জরিমানা (এলডি) করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর দাবি হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকায় ওই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি কিনতে পারেনি। যে কারণে পিডিবি সময়সূচি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
জানা গেছে, আবেদনকারী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বিগত সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ খাতে চুটিয়ে ব্যবসা করা কনফিডেন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া লিমিটেড, কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া লিমিটেড (ইউনিট-২), কনফিডেন্স পাওয়ার রংপুর লিমিটেড ও জোডিয়াক পাওয়ার চিটাগং লিমিটেড। কনফিডেন্স গ্রুপের ৪ প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বকেয়ার পরিমাণ উল্লেখ করেছে ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। তবে বিইআরসিতে দেওয়া আবেদনে জরিমানার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। বিগত সরকারের সময়ে ব্যাপক উত্থান ঘটে কনফিডেন্স গ্রুপের। কোম্পানিটির মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়।
অন্যদিকে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকীর কোম্পানি ডরিন গ্রুপের ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, ঢাকা নদার্ন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, বেনকো এনার্জি জেনারেশন, মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ও চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড আবেদন করেছে। কোম্পানিটির ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে ১১৭০ কোটি টাকা বকেয়া উল্লেখ করা হয়েছে। মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের বিপরীতে ১৪৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ৭৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা জরিমানা রয়েছে। অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের জরিমানার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি আবেদনে।
এ ছাড়া, বিইআরসিতে অভিযোগ দেওয়া কোম্পানির মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড, ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেড এবং ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেডের নামও রয়েছে। কোম্পানিটি তাদের জরিমানার পরিমাণ উল্লেখ না করলেও বকেয়া ৬৩২ কোটি টাকা ছাড় করার আদেশ চেয়েছে।
আরও রয়েছে, ডাচবাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, ইভিপি চিটাগং লিমিটেড, কাঞ্চন পূর্বাচল পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং ইউনাইটেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ার লিমিটেডের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জরিমানা বাবদ ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আটকে রাখার কথা বলা হয়েছে।
সবগুলো কোম্পানি বিগত সরকারের সময়ে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তখন দলবল নিয়ে হাজির হতেন মন্ত্রণালয়ে। মেয়াদ বাড়িয়ে বগল বাজাতে বাজাতে ফিরে যেতেন। প্রয়োজন না থাকলেও তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। শেষ দিকে নো-ইলেকট্রিসিটি নো-পেমেন্ট পদ্ধতিতে চুক্তি নবায়ন করা হয় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। সেখানেও ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি।
নো-ইলেকট্রিসিটি নো-পেমেন্টÑ অর্থাৎ বিদ্যুৎ দিলে ভাড়া পাবে না দিলে পাবে না। পুরোনো অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্বাভাবিকভাবে বসে থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের কারসাজিতে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থেকে চলেছে বেসরকারি ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর যেহেতু বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে, সে কারণে ক্যাপাসিটি পেমেন্টও গুনতে হয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার।