ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জানাল সরকারের প্রেস উইং

৮ মাসে ২ হাজার ৬১৬ খুন,  ১৫ হাজার নারী-শিশু নির্যাতন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০৫:২৭ এএম

চলতি বছরের আট মাসে ২ হাজার ৬১৬টি খুন এবং ১৫ হাজার ৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত অপরাধের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তুলনামূলক সার্বিক চিত্র গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং।

প্রেস উইংয়ের প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শেষ ১৩ মাসে খুনের হার বেশি বলে মনে হলেও এর আংশিক কারণ হলো শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত কমপক্ষে ১ হাজার ১৩০টি খুনের ঘটনায় গণঅভ্যুত্থানের পরে অর্থাৎ, ৬ আগস্ট, ২০২৪ সালের পর থেকে এ বছরের আগস্টের মধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে। অনেক হত্যা মামলা পূর্বে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে দায়ের করা যায়নি, পুলিশকেও মামলা নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পরেই এসব তথ্য সামনে এসেছে এবং মামলাগুলো রেকর্ড করা হয়েছে।

এ ছাড়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২৩ সালে খুনের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২৩, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৪০। অন্যদিকে ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে এবং ২০২৪ সালে ১৭ হাজার ৫৬৪টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে প্রেস উইং জানিয়েছে, বিগত বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে অনেক ধরনের অপরাধের ঘটনা বেড়েছে বলে মনে হলেও এর আংশিক হচ্ছে এখন মানুষ রাজনৈতিক প্রভাবশালী অপরাধীদের বিরুদ্ধেও সহজে মামলা করতে পারছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা আগে ভুক্তভোগীদের মামলা করতে বাধা দিত, বিশেষ করে যদি অপরাধীরা তাদের দলের কর্মী হয়। শেখ হাসিনার আমলে অপরাধের তথ্য কম দেখানো হতো। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নিতেও পুলিশ অনিচ্ছুক ছিল।

বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ডাকাতির ১ হাজার ৪০৫টি ঘটনা ঘটে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩১৪টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে ২০২৩-এর প্রথম ছয় মাসের তুলনায় এখনো বেশি। এর কারণ হলো, সমস্ত ডাকাতির ঘটনা এখন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই থানায় রেকর্ড করা হচ্ছে। থানাগুলোর মধ্যে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে নাগরিকেরা ভয় বা দ্বিধা ছাড়াই অপরাধের অভিযোগ করতে পারছেন।

এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২-এর অধীনে গত বছরে অপরাধের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২২৬টি, ২০২৫ সালে হয়েছে ৬৫১টি। এদিকে ২০২৪ সালে দাঙ্গার ঘটনা ছিল ১২৫, ২০২৫ সালে হয়েছে ৫৯। চুরির ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালে ছিল ৮ হাজার ৬৫২ এবং ২০২৫ সালে হয়েছে ৬ হাজার ৩৫৪।

এ থেকে বোঝা যায়, রিপোর্ট করা সহিংস অপরাধ (যেমন খুন) বাড়লেও সাধারণ অপরাধ নি¤œমুখী প্রবণতার দিকে ঝুঁকছে, যা উন্নত আইন প্রয়োগ এবং সঠিকভাবে মামলা রুজুর প্রক্রিয়া উভয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে খুন এবং কিছু অপরাধের বৃদ্ধি কেবল সহিংসতার বৃদ্ধি নয় বরং দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে থাকা মামলাগুলো অবশেষে দায়ের হওয়ার প্রতিফলন। গত ১৩ মাসে রেকর্ড করা মামলার মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে সংঘটিত হত্যার ঘটনাও হয়েছে।

অপরাধমূলক জবাবদিহি উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস উইং জানায়, রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ভয় ছাড়াই এখন ভুক্তভোগীরা রিপোর্ট করতে পারছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে কোনো নাগরিককে নিরুৎসাহিত করেন না বা বাধা দেন না। কয়েকটি ক্যাটাগরিতে, বিশেষ করে চুরির ঘটনা প্রকৃতপক্ষে কমেছে, যা আইনশৃঙ্খলার উন্নতির পাশাপাশি স্বাধীনভাবে মামলা দায়ের করার পরিবেশকে ইঙ্গিত করছে।