ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

ডেঙ্গু রোগী ৫০ হাজার ছাড়াল

পরিস্থিতি গুরুতর: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১০:৫১ পিএম

জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। গতকাল মৃত্যু হয়েছে আরও তিনজনের। বর্তমান পরিস্থিতিকে গুরুতর উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, জ¦র হলেই দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার আগেই হাসপাতালে না এলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানানো হয়, সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা যায়। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৮২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৫ জনে এবং শনাক্ত রোগী বেড়ে ৫০ হাজার ৬৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৭৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৩, ঢাকা বিভাগে ১৪৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১৮, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯০, খুলনা বিভাগে ৫৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৫, রাজশাহী বিভাগে ৬৪, রংপুর বিভাগে ১১ ও সিলেট বিভাগে পাঁচজন রয়েছে। ডেঙ্গুতে এক দিনে যে তিনজন মারা গেছে, তাদের মধ্যে দুজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ও একজন খুলনা বিভাগের।

এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৫ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ৪৮ হাজার একজন। এমন পরিস্থিতিতে এ দিন জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেরিতে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মৃত্যুহার বাড়ছে। সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু না করলে ডেঙ্গু দ্রুত জটিল আকার নেয়, ফলে রোগীকে বাঁচানোর সুযোগ কমে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান জানান, বেশির ভাগ মৃত্যুর কারণ হচ্ছে হাসপাতালে আসতে দেরি করা। গতকাল (রোববার) যে ৯ জন মারা গেছে, তাদের মধ্যে সাতজন ভর্তি হওয়ার দিনই মারা গেছেন। একজন পরদিন মারা যায়। এটা স্পষ্ট, রোগীরা হাসপাতালে আসছে অনেক দেরিতে।

ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ডেঙ্গুকে সাধারণ জ্বর ভেবে অবহেলা না করে, জ্বর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাছের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো জরুরি। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের সব হাসপাতালেই বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট, স্যালাইন এবং ওষুধ মজুত রয়েছে। তবে মৃত্যুহার কমাতে শুধু চিকিৎসা নয়, একই সঙ্গে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ, গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা এবং কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত সতর্ক ও তৎপর। কিন্তু জনগণের সহযোগিতা ছাড়া মৃত্যুহার কমানো কঠিন। সবাইকে অনুরোধ করছি, জ্বর হলে অবহেলা করবেন না, সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করান।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর গুরুতর পর্যায় সাধারণত জ্বরের ৩-৫ দিনের মধ্যে শুরু হয়। তাই এ সময়ের মধ্যেই রোগ শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা শুরু করাই রোগীর জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের নাগরিক, স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও জোরদার করতে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে একযোগে কাজ করতে।