ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকে ‘অবৈধ নিয়োগ’ বাতিলের দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০১:০৬ এএম

ব্যাংক খাতের অর্থ লুটকারী এস আলমের অবৈধভাবে নিয়োগকৃত অদক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইসলামী ব্যাংক থেকে অপসারণের দাবিতে ইসলামী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারস ফোরাম মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। একই সঙ্গে সারা দেশে ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শাখার সামনে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম অবিলম্বে ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলমের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণের আহ্বান জানান। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে অবৈধ এসব কর্মকর্তাকে অপসারণ করা না হলে শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন। প্রধান কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মো. মোহতাছিম বিল্লাহ, হাফিজুর রহমান, ইমাম হোসাইন, মাহমুদুল হাসান, এ টি এম সিরাজুল হক, ড. হারুনুর রশিদ, মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও মো. রতনসহ আরও অনেকে। এ সময় ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম, সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম, ইসলামী ব্যাংক প্রাক্তন ব্যাংকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী চাকারপ্রত্যাশী পরিষদ, সচেতন পেশাজীবী গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংক সিবিএ এবং সচেতন ব্যাংকার সমাজ একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এস আলম রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যংক জবরদখল করে নেয়। এ ব্যাংক থেকে বৈধ মালিকদের ভয় দেখিয়ে বিদায় করে। পাশাপাশি বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদেরও নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিতাড়ন করে। এ ব্যাংককে নিজের কব্জায় নিয়ে তিনি ইচ্ছামতো নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেছেন। তিনি কোনো রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই পটিয়া-চট্টগ্রামের লোক নিয়োগ দিয়ে এ ব্যাংকের চমৎকার কর্মপরিবেশ এবং উন্নত গ্রাহকসেবা ধ্বংস করে দিয়েছেন।

বক্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক মানবতা দেখিয়ে এত দিন এসব কর্মকর্তাকে চাকরিতে রেখেছে। এতে ব্যাংকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবছর এসব অবৈধ কর্মকর্তার পেছনে ১৫০০ কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক তাদের বৈধ করার জন্য যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করেছিল। ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তারা এ বাংকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিদ্রোহ। এ ধরনে বিদ্রোহীদের ব্যাংকে বহাল রাখার আর কোনো বৈধ পথ খোলা নেই। তাদের দ্রুত অপসারণ করার জন্য বক্তারা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তারা সারা দেশ থেকে মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান। তারা আরও বলেন, অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণকে কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন বলা যাবে না। ৬৩টি জেলার মানুষকে বঞ্চিত করে শুধু পটিয়া এবং চট্টগ্রামের লোকদের রাতের আঁধারে বাক্স বসিয়ে চাকরি দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল। অবৈধ কর্মকর্তাদের অপসারণের মাধ্যমে এ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা যেকোনো মূল্যে ইসলামী ব্যাংককে মাফিয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এস আলম ইসলামী ব্যাংক দখলের পর ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পদমর্যাদায় শুধু চট্টগ্রামের ৭ হাজার ২২৪ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০০ জনের বেশি শুধু পটিয়া উপজেলার। সারা দেশের চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে একটি জেলার প্রার্থীদের গোপনে নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের শৃঙ্খলা চরমভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। তারা বলেন, ব্যাংকের পুরোনো কর্মীদের ব্যাংক থেকে বিতাড়ন করে নিজ উপজেলার লোক নিয়োগ দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেয় এস আলম। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাই বিপ্লব পর্যন্ত ব্যাংকের দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নানাবিধ ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় এবং বরখাস্ত করে।

নূরুল হক নামে একজন ড্রাইভার বলেন, আমাকে তৎকালীন এইচআরের একজন প্রতিনিধি ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তা না হলে আপনি সার্ভিস বেনিফিট থেকে বঞ্চিত হবেন। বাধ্য হয়ে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিই। আমার মতো খলিল, আব্দুর রহমান, আব্দুল মোমিন ও দেলোয়ারও পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, এভাবে ড্রাইভার, মেসেঞ্জার, ক্লিনারসহ কয়েকশ নি¤œপদস্থ এবং আরো বেশ কিছু কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো হয়। আমাদের সবারই চাকরির বয়স আরও পাঁচ বছর অবশিষ্ট ছিল। এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিন পটিয়া উপজেলা থেকে লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য এমন করেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাহী বলেন, এস আলমের কথামতো ভুয়া বিনিয়োগের ফাইলে স্বাক্ষর না করায় ব্যাংকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন নির্বাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে অপরাধী হিসেবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।

উল্লেখ্য, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তার যোগ্যতা ও দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য ব্যাংক ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র মাধ্যমে মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করে। এসব কর্মকর্তা মূল্যায়ন পরীক্ষা দিতে অস্বীকার করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে ৫৩৮৫ জনকে মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এদের একটি বড় অংশÑ অর্থাৎ ৪৯৭১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এর মধ্যে ৪১৪ জন কর্মকর্তা মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেন। যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি ব্যাংক তাদের ওএসডি করেছে এবং বিদ্রোহী ৪০০ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।