আরব সাগরের বুকে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন বন্দর তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। মূলত সম্পর্ক উন্নয়ন এবং খনিজ সম্পদ রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবে দেশটি। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। পাকিস্তানের এমন প্রস্তাবে উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী ভারত। এদিকে, আরব সাগরে মার্কিন আধিপত্য বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুই দশকের উষ্ণ সম্পর্কের পর সম্প্রতি বাণিজ্য ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। গেল মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত বন্ধে কৃতিত্ব দাবি করেন ট্রাম্প। নয়াদিল্লি তা অস্বীকার করলেও, পাকিস্তান ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রাম্পের ব্যাপক প্রশংসা করে। এমনকি এ জন্য ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার কথাও বলেছে পাকিস্তান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, আরব সাগরের বুকে যুক্তরাষ্ট্রকে এবার বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। গেল মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনির।
সেখানেই বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, বেলুচিস্তান প্রদেশের সমুদ্রতীরবর্তী শহর পাসনিতে বন্দর তৈরি এবং তা পরিচালনাও করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষই বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। প্রস্তাবিত পাসনি বন্দরটি ইরান থেকে ১৬০ কিলোমিটার এবং গোয়াদর চীনা বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া, সেখানে থেকে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে ভারতের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা চাবাহার বন্দর। যা নিয়ে অনেকটা উদ্বিগ্ন ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের নাকের ডগায় বন্দর গড়ার প্রস্তাব নিরাপত্তা সংকটে পড়বে গোটা অঞ্চল।
সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের কৌশলগত বিষয় বিশ্লেষক ক্যাপ্টেন অলোক বানসাল বলেন, ‘আরব উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে কেন্দ্রবিন্দু বহুদিন ধরেই। যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই এই অঞ্চলের সব ধরনের বন্দরে নজর রাখতে চায়। বিশেষ করে যেগুলো ইরানের কাছাকাছি আছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করুক। তাতে অনেক দিক দিয়ে পাকিস্তান লাভবান হবে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও লাভবান হবেন। কারণ বিরল খনিজ আমদানিতে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন গোয়াদর বন্দরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।’
আরব সাগরে বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অন্যতম একটি দিক। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের খনিজ সম্পদ খাতে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাতে চায় পাকিস্তান। হোয়াইট হাউসের বৈঠকে একটি বক্সে ট্রাম্পকে দুর্লভ খনিজের কিছু নমুনা দেখান পাকিস্তান সেনাপ্রধান। যেগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই খনিজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবেদনে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস দাবি করেছে, প্রস্তাবিত বন্দরটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক স্বার্থেই ব্যবহার করা হবে। সেখানে নৌঘাঁটি বা সামরিক উদ্দেশ্যে এটি পরিচালনা করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। খনিজসমৃদ্ধ বেলুচিস্তানের পাসনিতে প্রস্তাবিত বন্দরটি যুক্ত হবে রেলপথের মাধ্যমে। এই বন্দরের নির্মাণ ব্যয় ১২০ কোটি ডলার পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ অর্থায়নে হবে।
এই পরিকল্পনাকে দুঃসাহসিক উল্লেখ করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, মূলত স্পর্শকাতর ওই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের শক্ত অবস্থান তৈরির সুযোগ করে দেবে। যা চীন, ভারত ও ইরানের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও পাকিস্তানের দাবি, প্রস্তাবটি সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। এখানে আঞ্চলিক সংকট তৈরির শঙ্কাও উড়িয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ।পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নাজাম শেঠি বলেন, ‘এই প্রস্তাব পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। এটি সম্ভবত কোনো বেসরকারি কোম্পানির পক্ষ থেকে মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু খনিজ সম্পদ রপ্তানির কাজেই ব্যবহার করা হবে।