ঢাকা সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

গাজা-সংকট

ঘর নেই তবু তাদের ঘরে ফেরার আয়োজন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম
  • আজ হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে বন্দিবিনিময়
  • ট্রাম্প-সিসির সভাপতিত্বে মিশরে ‘গাজা শান্তি সম্মেলন’ আজ
  • গাজায় মাসে ৬২ হাজার টন সহায়তা প্রয়োজন : ডব্লিউএফপি
  • ধ্বংসের ছায়া কাটিয়ে গাজা শহরে ফিরেছে ৫ লাখের বেশি মানুষ

গাজায় আবারও ফিরতে শুরু করেছে প্রাণচাঞ্চল্য। গাজার বাসিন্দারা যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ৬৭ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। পুরো গাজায় নেমে এসেছে মানবিক বিপর্যয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজার ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এখন তাঁবু বা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নারী রিম জিদিয়াহ আল জাজিরাকে বলেন, গাজা শহরে ফিরে আসার পর তিনি কিছুই পাননি। শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। জিদিয়াহ বলেন, ফিরে আসা ব্যক্তিরা ‘এত হারিয়ে যাওয়া’ এবং অসহায় বোধ করছেন। মানুষ রাস্তায় হাঁটছে এবং নিজেদের জিজ্ঞাসা করছে, ‘আমাদের কী হয়েছে?’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা জানি না কী করব। আপনি এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন, যিনি দুই বছর ধরে গণহত্যার মধ্যে বেঁচে ছিলেন। আমরা সবকিছু হারিয়েছি। আমাদের সবকিছু প্রয়োজন। আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সবকিছু দরকার।’

এদিকে গাজা-সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বনেতারা মিশরে এক টেবিলে বসছেন আজ সোমবার। মিশরের পর্যটন শহর শারম আল-শেখে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। শনিবার এক বিবৃতিতে মিশরীয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, সম্মেলনের লক্ষ্য হলো গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান ঘটানো, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নতুন যুগের সূচনা করা। বৈঠকে ২০টিরও বেশি দেশের নেতা অংশ নেবেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও স্পেনের পেদ্রো সানচেজও অংশ নেবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের কোনো প্রতিনিধি অংশ নেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ৫ লক্ষাধিক মানুষ গাজা শহরে ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছে সেখানকার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, ইসরায়েলের হামলা বন্ধ হওয়ার পরপরই বিপুলসংখ্যক মানুষ গাজা শহরের দিকে ফিরতে শুরু করে। গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লক্ষাধিক মানুষ গাজা শহরে ফিরে এসেছে।

যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও অভিযানের কারণে প্রায় ৭ লাখ মানুষ গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা এ যাত্রায় মিশ্র অনুভূতির মধ্যে রয়েছে। ঘরে ফেরার আনন্দের পাশাপাশি দুই বছরের যুদ্ধে তৈরি গভীর বেদনার কথা জানিয়েছে তারা। গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে ৩২ বছর বয়সি আমির আবু ইয়াদে বলেন, ‘এই অবস্থার জন্য (ফিরতে পারা) আল্লাহর শোকর করি, যদিও আমরা ক্ষত আর বেদনায় পরিপূর্ণ মন নিয়ে আমাদের এলাকায় ফিরে যাচ্ছি।’

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, বিপুল সংখ্যায় ত্রাণবাহী লরি এখনো গাজায় প্রবেশ করেনি। সংস্থাটি বলছে, তাদের লক্ষ্য শহরজুড়ে ১৪৫টি জায়গায় নিয়মিত খাদ্য বিতরণ আবার শুরু করা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, বৃহস্পতিবার ৫০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছে। তবে ইসরায়েল এসব প্রত্যাখ্যান করেছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, কোথাও ক্ষুধা দেখা গেলে তার দায় সাহায্য সংস্থা ও হামাসের। গাজা উপত্যকায় প্রতি মাসে ৬২ হাজার মেট্রিক টন মানবিক সহায়তা পৌঁছানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিনিধি ও ফিলিস্তিনের কান্ট্রি ডিরেক্টর আন্তোইন রেনার্ড। গত শনিবার তিনি বলেন, গত দুই মাসে আমরা গাজায় আরও বেশি পরিমাণে সহায়তা পাঠাতে পেরেছি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। গাজায় যে পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হতো, তার মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি।

এখন আমাদের প্রতি মাসে ৬২ হাজার মেট্রিক টন সহায়তা গাজা উপত্যকায় পৌঁছানো দরকার। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তি সমঝোতার আওতায় ৪৮ জিম্মিকে মুক্তি দিতে হামাসকে আজ সোমবার স্থানীয় সময় ১২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত রয়েছেন। বাকিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা ওসামা হামদান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সমঝোতা অনুযায়ী সোমবার সকালে বন্দিবিনিময় শুরু হবে। 

চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলের হাতে থাকা বাকি সব জিম্মি এবং প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে ঠিক কখন বা কোথায় এই মুক্তি ঘটবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের সম্ভাব্য মুক্তির আগে তেলআবিবে গত শনিবার এক সমাবেশে অংশ নিয়েছে লাখ লাখ ইসরায়েলি। ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, জিম্মিরা ঘরে ফিরে আসছে। তিনি গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের ফেরানোর বিষয়টিকে সম্ভব করে তোলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন।