বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ১২:০৩ এএম

ছাত্র সংসদ নির্বাচন : রাকসু

তিন যুগ পরের ভোট উৎসবে অংশ নিতে উন্মুখ শিক্ষার্থীরা

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ১২:০৩ এএম

তিন যুগ পরের ভোট  উৎসবে অংশ নিতে  উন্মুখ শিক্ষার্থীরা

প্রায় তিন যুগের অচলায়তন ভেঙে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে ১০টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থী ২৪৭ জন। রাকসুর পাশাপাশি সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদেও নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ইতিমধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। পুলিশ জানিয়েছে, নির্বাচনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিশ^বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরুতেই ‘দুই মাস’ সময় চেয়ে আবেদন করে শাখা ছাত্রদল। এ ছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পোষ্য কোটা ঘিরে নানা উত্তেজনায় রাকসু নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। কয়েক দফায় পেছায় নির্বাচনের তারিখ। ছয়বার তপশিল পুনর্বিন্যাস করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মনে রাকসু নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নির্বাচন হচ্ছে। আজ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন শিক্ষার্থীরাও

শিক্ষার্থীরা জানান, এমন কেউ নেতৃত্বে আসা উচিত, যার কাছে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সবার আগে স্থান পাবে। দলীয় কেউ নির্বাচিত হলেও তিনি যেন দলের ওপর শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন।

তিন যুগ পরের এই নির্বাচনের কারা বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়বেনÑ এমন বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ^বিদ্যালয়ের ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনাবাসিক এবং মোট ভোটারের ৩৯ দশমিক ১৪ শতাংশ নারী। তাই এ দুই গোষ্ঠীকে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর মনে করছেন প্রার্থীরা। এ দুই গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ইশতেহার সাজানোর পাশাপাশি তাদের আকৃষ্ট করতে চালিয়েছেন সর্বোচ্চ প্রচারণা।

প্রার্থীরা এসব ভোটারের সমর্থন পেতে ইশতেহারে আবাসন, অনাবাসিকদের জন্য ভাতা, বাসের ট্রিপ বাড়ানোর বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছেন। মেসগুলোতেও গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিতকরণে হেল্পলাইন, যৌন নিপীড়ন সেল, সাইবার সুরক্ষা, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, চাইল্ড ডে-কেয়ার বা আইসিইউ, হিজাব বা নিকাবের অধিকার এবং চলাফেরার স্বাধীনতার বিষয়গুলো ইশতেহারে স্থান পেয়েছে।

কেমন নেতৃত্ব চানÑ এ বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রানা রায় বলেন, যারা নির্বাচিত হবেন, তারা যেন সবার আগে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ চিন্তা করেন। দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও তারা যেন দলের থেকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ‘রাসু’ নামে দুবার এবং ‘রাকসু’ নামে ১৪ বারসহ মোট ১৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে নির্বাচিত ৩২ জন ভিপি-জিএসের মধ্যে বাম ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রার্থী ছিলেন ১৩ জন। গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত প্রার্থীদের অবস্থান বেশ নড়বড়ে। সাতটি বাম ছাত্র সংগঠন মিলে তাদের প্যানেল পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। ভোটের মাঠেও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি তারা। বর্তমানে ছাত্রদলের প্যানেলও মাঠে শক্ত অবস্থানে আছে। তবে, এর আগে রাকসুর শীর্ষ দুই পদে শিবির কখনো জয়ী হতে না পারলেও এবারের নির্বাচনি মাঠে দলটির শক্তিশালী অবস্থান আছে।

এদিকে আজ ভোটগ্রহণের জন্য গতকাল বুধবার বিকেলের মধ্যেই ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রের ৯০০ বুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। প্রতিটি কেন্দ্রের চারপাশে ৪০০ গজের মধ্যে চৌহদ্দি নির্মাণ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। কেন্দ্রের সব বুথ স্থাপন করা হয়েছে সাদা কাপড়, বাশ-কাঠ দিয়ে। প্রতিটি বুথের মধ্যে একটি টেবিল ও চেয়ার রাখা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে মোট ১০০ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে তিনটি কেন্দ্র হবে। এই কেন্দ্রে বেগম খালেদা জিয়া হল, তাপসী রাবেয়া হল ও রহমতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। শহিদ জিয়াউর রহমান হল শহীদুল্লাহ্্ কলা ভবনের ১৫০ নম্বর কক্ষে, ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে ভবনের উত্তর গেট দিয়ে প্রবেশ করে ১২৮ নম্বর কক্ষে জুলাই-৩৬ হল এবং দক্ষিণ-পূর্ব গেট ব্যবহার করে ১২৫ নম্বর কক্ষে রোকেয়া হল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের পূর্ব হল রুমে সৈয়দ আমীর আলী হল এবং পশ্চিম হলরুমে শাহ মখদুম হল, জগদীশ চন্দ্র একাডেমিক ভবনের টিচার্স লাউঞ্জে মাদার বখশ হল এবং ১০৫ নম্বর কক্ষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছি না। কোনো মহল এই চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া সাইবার সুরক্ষায় আমাদের দুটি ইউনিট কাজ করছে।’ গতকাল দুপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যে জায়গাগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে নিরাপত্তার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। আরএমপির পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি হেডকোয়ার্টার থেকে চাহিদা এক হাজার ফোর্স আনা হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ। তিনি বলেন, ‘ভোটে কারচুপি ঠেকাতে আমরা শুধু অমোচনীয় কালির ওপরে নির্ভর করছি না; আমরা থ্রিডি লেভেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। প্রথমত, শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডের সত্যতা যাচাই করব। দ্বিতীয়ত, ভোটারের আইডির জন্য একটি ইউনিক আইডি দেওয়া হয়েছে, সেটি যাচাই করব। সবশেষে ভোটারের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থেকে নিশ্চিত করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সন্দেহ তৈরি হলে একটি বিশেষ গোপনীয় কিউআর কোড থাকবে। ফলে আমরা এটার নাম দিয়েছি থ্রি ডাইমেনশনাল সিকিউরিটি। প্রতিটি ধাপে ফুলপ্রুফ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটাকে অগ্রাহ্য করে কোনো অবস্থাতেই কোনো ধরনের ভোট জালিয়াতির কোনো সুযোগ আমরা রাখিনি।’ গতকাল দুপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ভোটের ফলাফল প্রস্তুত করতে ৪৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আমরা ফলাফল প্রস্তুত করতে ৪৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি কমিটি করেছি। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব কেন্দ্র থেকে ব্যবহৃত ব্যালটবাক্স সিলগালা করে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নিয়ে আসা হবে। সেখানেই ১৭টি হলের ফলাফল ধারাবাহিকভাবে তৈরি করা হবে। ওএমআর মেশিনে এটি রিড করে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে ফলাফল প্রকাশের চেষ্টা করা হবে। মেশিনের সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা আশা করছি সর্বোচ্চ ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ফল প্রকাশ করতে পারব।’

রাকসু নির্বাচনে ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার রয়েছে। রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে ২৪৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রার্থী লড়াই করবেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) ১৩ ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ জন।

রাকসুর অন্যান্য পদের মধ্যে ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, সহকারী ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ৬, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ১০, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৬, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৮ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় এসেছে।

এ ছাড়া মিডিয়া ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৬, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১২, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৬ এবং নির্বাহী সদস্যপদে ৫৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এই নির্বাচনে দশের অধিক প্যানেল রয়েছে। আলোচিত প্যানেলগুলো হলোÑ ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’,  ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্বে গঠিত ‘রাকসু ফর র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘আধিপত্যবাদবিরোধী ঐক্য’, বাম জোটের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঘোষিত ‘অপরাজেয় ’৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’, সাবেক আরেক নারী সমন্বয়কের নেতৃত্বে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন মনোনীত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!