মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ১২:২৬ এএম

‘শাপলা’ নিয়ে ইসি এনসিপি দ্বন্দ্ব চরমে

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ১২:২৬ এএম

‘শাপলা’ নিয়ে ইসি  এনসিপি দ্বন্দ্ব চরমে

  • অন্য প্রতীক দিয়ে যে কোনো সময় গণবিজ্ঞপ্তির ঘোষণা ইসির
  • প্রয়োজনে আন্দোলনের হুমকি এনসিপি নেতাদের
  • রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা

বিধিমালায় শাপলা প্রতীক না থাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা দেওয়ার সুযোগ নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যে কোনো সময় অন্য প্রতীক দিয়ে যে কোনো সময় গণবিজ্ঞপ্তির ঘোষণাও দিয়েছে নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাটি। কমিশন বলছে, এ বিষয়ে কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। প্রতীক বরাদ্দের সময় নিবন্ধনযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা প্রকাশের সঙ্গে প্রতীকের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নামে রাজনৈতিক দলটি নিজেদের রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে শাপলা পেতে মরিয়া। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তীব্র আন্দোলনের কথাও বলছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে দেশে আবারও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

গত মাসের ৩০ তারিখে এনসিপিকে তপশিলে থাকা ৫০টি প্রতীক থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত পছন্দের সময় দেওয়া হয় প্রতীক বাছাইয়ের জন্য। এ বিষয়ে দলটিকে চিঠিও দেয় ইসি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এনসিপি পছন্দের প্রতীক বাছাই না করে বিধি সংশোধন করে ফের শাপলা বরাদ্দের দাবি জানায়। কিন্তু ইসি কাউকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে থাকায় তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছে বর্তমান সময়ের আলোচিত রাজনৈতিক দলটি।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের সময় নিবন্ধনযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা প্রকাশের সঙ্গে প্রতীকের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে। যেহেতু এনসিপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রতীক বাছাই করেনি, নির্বাচন কমিশনকে জানায়নি, তাই এ সপ্তাহের যে কোনো সময় স্বীয় পদ্ধতিতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।’ গতকাল সোমবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপি শাপলা প্রতীক পাচ্ছে না বিধি মোতাবেক। কমিশন ইতিমধ্যে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্প প্রস্তাব কমিশনের কাছে আসেনি। এখনো কমিশন আগের অবস্থানেই রয়েছে। ইসির স্বীয় বিবেচনায় প্রতীক দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি এ সপ্তাহে জারি করা হবে।’

তবে শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি অংশ নেবে বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে গতকাল সোমবার এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, যেহেতু কোনো আইনগত বাধা নেই, আমরা আমাদের জায়গা থেকে অবশ্যই শাপলাকে এনসিপির প্রতীক হিসেবে চাই। শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী সংসদ নির্বাচনে এনসিপি অংশগ্রহণ করবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে শাপলা আদায় করব।’ তিনি বলেন, ‘যখন একটা জিনিস আমার প্রাপ্য, এনসিপির প্রাপ্য, যখন সেটা দেওয়া হবে না, অবশ্যই স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরুদ্ধে আমার লড়াই করতে হবে। এনসিপির যদি প্রয়োজন হয়, এনসিপি এই লড়াইটা রাজনৈতিকভাবে রাজপথে করবে। যদি প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৪৯৫টি উপজেলার এনসিপির অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ রাজপথে নেমে এই অধিকারের জন্য লড়াই করবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, আমরা শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এনসিপি গঠনের প্রথম থেকেই শাপলাকে প্রতীক হিসেবে পেতে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। যেখানে কোনো আইনগত বাধা নেই, তার পরও এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে, এটি যৌক্তিক নয়। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারী আচরণ এনসিপি তথা তরুণ প্রজন্ম মেনে নিতে পারে না। এনসিপি তার শাপলা প্রতীকের বিষয়ে আগের আবস্থায় অনড় রয়েছে। শাপলা প্রতীক নিয়েই এনসিপি নির্বাচনে যাবে ইনশাল্লাহ। প্রয়োজনে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্বদানরকারী ছাত্রদের নিয়েই গঠিত এই জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। ইতিমধ্যে তারা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলায় জেলায় গিয়ে করেছে পদযাত্রা। রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার সব যোগ্যতাও অর্জন করেছে দলটি। প্রতীক চূড়ান্ত হলে দলটিকে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে। কিন্তু প্রতীক ইস্যুতেই দুটি ভিন্ন অবস্থানে থাকায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে দলের প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে তৎকালীন বিচারপতি আব্দুর রউফ কমিশন পাঁচটা নীতি অনুসরণ করে। এগুলো হলোÑ ১৯৭৯ সালে এবং তারপরে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের অনুকূলে বরাদ্দকৃত প্রতীক যথাসম্ভব বহাল থাকবে, রাজনৈতিক দলের অতীত ও বর্তমান সদস্যসংখ্যা, ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ফলাফল বিবেচনায় থাকবে, যেসব রাজনৈতিক দল শুধু বিশেষ একটি প্রতীকের জন্য আবেদন করবে, তা সেই দলের অনুকূলে সংরক্ষণ করা হবে, একই প্রতীকের জন্য একাধিক রাজনৈতিক দল দাবিদার হলে তাদের সমঝোতার অনুরোধ; ব্যর্থ হলে কমিশন প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে স্বীয় পদ্ধতি অবলম্বন করবে। প্রয়োজনে লটারি হবে, যেসব রাজনৈতিক দল প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে একাধিক পছন্দ থাকবে, তাদের পছন্দ যথাসম্ভব বিবেচনায় রাখবে।

এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সময়ের আলোচিত দলটির প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে তৈরি হওয়া এই সংকট নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল লতিফ মাসুম। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন এটা বড় বিষয়, তাহলে এটা বড় বিষয়। আমার মনে হয় এটা অযথাই একটা ইস্যু তৈরি করছে। এনসিপি একটা অন্যায় আবদার নিয়ে গো ধরে বসে আছে, এটা ঠিক না। ইসির তালিকায় যেহেতু শাপলা নেই, তাহলে তা দেওয়া সম্ভব নয়। তারা গোলাপ ফুল বা অন্য কিছু নিক। তা না করে তারা শাপলার জন্যই বসে আছে। গণঅভুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির কাছে এমন আশা করা যায় না। আমরা চাই না আসন্ন নির্বাচনে শুধু এই একটা ইস্যু নিয়ে কোনো ধরনের অরাজকতা তৈরি হোক। সুষ্ঠু এবং একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। আশা করি এনসিপি কম্প্রোমাইজে আসবে।’

প্রসঙ্গত, জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যখন ইসিতে আবেদন করেছিল, তখন প্রতীক হিসেবে শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোন চেয়েছিল। এর কয়েক দিন পরে আবার আরেকটি চিঠি দেয়। ওই সংশোধিত চিঠিতে শাপলা, লাল শাপলা অথবা সাদা শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক চায় এনসিপি। গত বেশ কয়েক মাস ধরেই এনসিপির নেতাকর্মীদের অনেকে শাপলা প্রতীকের দাবিতে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে একাধিকবার দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা পেতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটি। তবে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ইসি গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে যে চিঠি পাঠায়, সেই চিঠিতে বলা হয়, ৭ অক্টোবরের মধ্যে ইসির তালিকাভুক্ত ৫০টি প্রতীক থেকে পছন্দ যে কোনো একটি প্রতীক নেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে ওই চিঠিতে জানানো হয়, দলটির প্রথম পছন্দ ‘শাপলা’ বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনার বিধিমালার তালিকায় নেই, তাই এটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ৫০টি মার্কার মধ্যে আলমিরা, খাট, উটপাখি, ঘুড়ি, কাপ-পিরিচ, চশমা, দালান, বেগুন, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মার্কা রয়েছে।

কিন্তু এখন শাপলা ছাড়া আর কোনো প্রতীক এনসিপি নেবে না জানিয়ে দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব ও আইন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মুসা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচন কমিশনকে ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠির জবাব দিয়েছেন। এনসিপি ইসিকে জানিয়েছে, শাপলার বাইরে অন্য প্রতীক তারা গ্রহণ করবে না। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠির সঙ্গে শাপলা প্রতীকের সাত ধরনের নমুনাও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু শাপলা প্রতীক পেতে আমাদের কোনো আইনগত জটিলতা নেই, সে কারণে আমরা ইসিকে আমাদের আগের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছি। এনসিপি শাপলার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবে না।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!