চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলির ঘটনায় ফের উঠে এসেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’ বাহিনীর নাম। সাজ্জাদ কারাগারে থাকলেও তার বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন আরেক শীর্ষসন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে চাঁদাবাজি, বালু ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাজ্জাদ ও প্রতিদ্বন্দ্বী সারোয়ার হোসেন বাবলার মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়। সেই বিরোধের জেরেই গতকালের গুলির ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
গতকালের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুজন ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে সারোয়ার বাবলার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় লোকজন ভীত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিএনপির এমপি পদপ্রার্থী এরশাদ উল্লাহ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।
এর আগে ৩০ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার চন্দনপুরা এলাকায় প্রাইভেট কারে ব্রাশফায়ারে খুন হন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও বখতেয়ার উদ্দিন মানিক। এই হামলা চালানো হয় মূলত সারোয়ারকে হত্যার উদ্দেশ্যেই। তবে সেদিন ভাগ্যক্রমে সারোয়ার বেঁচে যান। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় সিএনজিচালক মো. রবিন ও মো. হৃদয়। সে ঘটনায়ও উঠে আসে কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদের নাম। তখন কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় বালুমহালের আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের অবস্থান নেওয়া থেকেই শুরু হয় সংঘাত।
তখন আহত রবিন জানিয়েছিল, ছোট সাজ্জাদের লোকজন সারোয়ারকে খুন করতে এ হামলা চালায়। ‘সাজ্জাদের সঙ্গে সারোয়ারের আগে থেকেই বিরোধ ছিল। সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের পর রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়।’
ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। একসময় সারোয়ার হোসেনও তার অনুসারী ছিলেন। ২০১৫ সালের পর থেকে সারোয়ার তাদের কাছ থেকে সরে যান।
২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটজন নিহত হন। সে ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। এরপর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসী কর্মকা- থামাননি। বিদেশ থেকে তার বাহিনীর মাধ্যমে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে অপরাধ পরিচালনা করে আসছেন। তার এসব কর্মকা- পরিচালনা করে আসছেন সাজ্জাদ হোসেন (ছোট সাজ্জাদ)।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, কারাগারে থাকা চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ গ্রুপের সঙ্গে সারোয়ার বাবলার পুরোনো বিরোধের জেরেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। মূল লক্ষ্য ছিল সারোয়ার বাবলা, তবে গুলির আঘাতে বিএনপি প্রার্থীও আহত হন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আহতদের চট্টগ্রাম নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে নিলে সারোয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির সারোয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে ১৬টি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা তিনি।

