নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। তারই রেশ ধরে গতকাল বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থীর জনসংযোগের সময় গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-পাঁচলাইশ) আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় নিহত হন সারোয়ার হোসেন বাবলা নামে একজন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির শান্তসহ আমিনুল হক ও মর্তুজা হক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন সারোয়ার হোসেন। এদিকে এ ঘটনায় জামায়াত-শিবির জড়িত বলে দাবি নগর বিএনপির। অন্যদিকে নিহত সারোয়ার পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ‘সন্ত্রাসী’। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। তবে তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে দলটি। গুলিবিদ্ধ হলেও আহত এরশাদ উল্লাহ শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।
দলীয় সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল বুধবার নির্বাচনি প্রচারের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ নগরের চান্দগাঁও চালিতাতলী খন্দকারপাড়া এলাকায় যান। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত এক নেতা জানান, ‘চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হয়ে জনসংযোগ করার সময় সরোয়ার বাবলাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ সময় পাশে থাকা এরশাদ উল্লাহ এবং অন্যরা গুলিবিদ্ধ হন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনোনয়ন পেয়ে হামজারবাগ এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন এরশাদ উল্লাহ। প্রচারের সময় তার পায়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গাড়ি নয়, ট্যাম্পু দিয়ে এসে তারা গুলি করে পালিয়ে যায়। তাদের পিছু পিছু কিছু লোক ধাওয়া করে কিন্তু তাদের ধরা যায়নি। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। কারা তাকে গুলি করেছে তাৎক্ষণিকভাবে সেই তথ্য জানা যায়নি।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন জানান, এরশাদ উল্লাহ বায়েজিদ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা এসে গুলি করে। এতে এরশাদ উল্লাহসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে কেন এই ঘটনা ঘটছে তা জানি না। এরশাদ উল্লাহকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ জানান, নির্বাচনি প্রচারকালে নগর বিএনপির আহ্বায়কসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, নির্বাচনি প্রচারকালে জামায়াত-শিবিরের লোকজন এরশাদ ভাইকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। এ সময় সারোয়ার বাবলা ঘটনাস্থলে মারা যান।
নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শওকত আজম খাঁজা বলেন, নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় জামায়াতের লোকজন এরশাদ উল্লাহ ভাইয়ের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া তার সঙ্গে থাকা সারোয়ার বাবলা নামে একজন মারা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল (আজ) আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।
এদিকে এ ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। যারা রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে, এ ঘটনায় তাদের হাত থাকতে পারে। তিনি হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির এক নেতা বলেন, এটা একটা বিশাল ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা একটি নির্বাচনি আবহের দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এরশাদ উল্লাহর পায়ে গুলি করে সারা দেশের বিএনপিপ্রার্থীদের বার্তা দেওয়া হয়েছেÑ তারা যেন নির্বাচনে না যায়। ফলে এমন কর্মকা- আমাদের আশাহত করেছে। যারাই নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে না তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করি।
এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই গোলাগুলির খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই এরশাদ উল্লাহসহ আহতদের এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। অন্তত কয়েক হাজার নেতাকর্মী সেখানে ভিড় করেন।
অন্যদিকে এ ঘটনার পরপরই নগরের কাজীর দেউরি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে নগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। এ সময় নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম, শওকত আজম খাঁজাসহ আরও অনেকে অংশ নেন।
গুলিতে নিহত সরোয়ার ‘সন্ত্রাসী’, বিএনপির কেউ নয় : এদিকে চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনি গণসংযোগে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) পুলিশের তালিকার একজন শীর্ষ ‘সন্ত্রাসী’। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।
তবে বিএনপি বলছে, সারোয়ার তাদের কেউ নন। জনসংযোগে শত শত লোক অংশ নেয়। পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয়।
এর আগে গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সারোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সারোয়ার। পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে সারোয়ারকে গুলি করা হয়।
সারোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেন। তার বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায় সারোয়ারকে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুর বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির প্রার্থী জনসংযোগ করার সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেয়। সারোয়ার সেখানে অংশ নিলে সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে তাকে গুলি করা হয়।

