ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকছে না মাধ্যমিক স্তর

সেলিম আহমেদ
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ৭২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা হলেও তা আর থাকছে না। নানা সংকটের কারণে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি না নিলেও যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি আছেন তারা ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সুযোগ পাবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের এই তিন ক্লাস বাদ দেওয়ার কারণে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার পথ সংকুচিত হচ্ছে। তবে এই বাদ দেওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এসব বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা পরিচালনার জন্য বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো আর শিক্ষক দিয়ে চলত মাধ্যমিকের ক্লাস। ফলে এই তিন ক্লাস গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সবার কাছে।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’র আলোকে তিন স্তরবিশিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পঞ্চম থেকে বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ৭২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয় এই প্রকল্প। ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পরে সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে তা পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে শুরুতে তোড়জোড় থাকলেও পরে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দেখা দেয় যোজন যোজন ফারাক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই তিন শ্রেণি নিয়ে সংকটে পড়ার প্রধানতম কারণ ছিল সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। আর ষষ্ঠ থেকে ওপরের স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ হিসেবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করার কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। দুই মন্ত্রণালয় একযোগে কাজটি করতে পারেনি। আবার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এক মন্ত্রণালয়ের অধীনেও নেওয়া হয়নি।

এসব কারণে গত কয়েক বছর থেকে প্রাথমিক থেকে এই তিন ক্লাস বন্ধের চিন্তা করলেও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তা আর এগোয়নি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারে ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত পরামর্শক কমিটি এই স্কুলগুলো থেকে অষ্টম শ্রেণি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। তাদের সুপারিশের পরই আগামী বছর থেকে কোনো ক্লাস নতুন করে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানিয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে শিক্ষা ভর্তি না নেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই তথ্য সব জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তরে জানিয়েছে।

এই চিঠির থেকে জানা যায়, আগামী শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই তিন ক্লাসে নতুন করে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া যাবে না। তবে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান সমাপন করতে পারবে। তাদের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী অন্য কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে চাইলে তাদের নিরুৎসাহিত করা যাবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চালু রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের এই তিন ক্লাসে ৩৫৫ জন শিক্ষার্থী পাঠদান করেন। তবে এই তিন ক্লাসকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রেহানা পারভীন বলেন, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাদ গেলে ভালোই হবে। কারণ আমাদের বিদ্যালয়ে যে জনবল রয়েছে তা প্রাথমিক বিদ্যালয় চালানোর জন্য ঠিক আছে। কিন্তু অতিরিক্ত তিন ক্লাস চালু হলেও যেখানে কোনো জনবল কিংবা অবকাঠামো দেওয়া হয়নি। প্রাথমিকের জনবল আর অবকাঠামো দিয়েই চলছে মাধ্যমিকের পাঠদান।

তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতে একধরনের অভিজ্ঞতা আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা। আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য আমাদের নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিজ্ঞ করে তোলা হয়। কিন্তু মাধ্যমিকে পাঠদানের জন্য আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) এ. কে. মোহম্মদ সামছুল আহসান বলেন, এই তিন ক্লাসে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি না নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।