শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৩১ এএম

এলপিজি সিলিন্ডার

পাড়ায় পাড়ায় দোকান, নেই কোনো নীতিমালা

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৩১ এএম

পাড়ায় পাড়ায় দোকান,  নেই কোনো নীতিমালা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও উপজেলা এলাকায় দিন দিন বেড়ে চলছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের দোকান। অধিকাংশ দোকানই গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকায়, ঘর-বাড়ি, স্কুল কিংবা বাজারের পাশে। কিন্তু এ ব্যবসার ওপর নেই কার্যকর কোনো নীতিমালা বা তদারকি। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শান্তিনগর থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, উত্তরার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ছোট দোকান থেকে শুরু করে গ্যারেজ-ঘরেও চলছে সিলিন্ডার বিক্রি ও রিফিল। এসব দোকানের অনেকটিরই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বা বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে কোনো অনুমোদন নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও প্রায় নেই বললেই চলে। নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, নেই বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, এমনকি অনেক জায়গায় দোকান মালিকেরা জ্বালানো চুলার পাশেই সিলিন্ডার মজুদ রাখছেন।

লাইসেন্স ছাড়াই কীভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে রাজধানীর মধুবাগ এলাকার বিসমিল্লাহ্ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রূপম ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, লাইসেন্স নিতে গেলে অনেক ঝামেলা, খরচও বেশি। তাই স্থানীয়ভাবে সবাই নিজের মতো করে বিক্রি করে। এখন তো প্রায় প্রতিটি পাড়ায় দোকান আছে। আমার দোকান কী দোষ করল? একই রকম কথা বলেন রাজধানীর ভূতের গলি এলাকায় ছোট দোকানে সিলিন্ডার বিক্রেতা আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, এর জন্য যে লাইসেন্স লাগে তা-ই তো জানতাম না এত দিন। লাইসেন্স লাগলে লাগুক। কোম্পানি সেগুলো দেখবে। আমরা তো কোম্পানি থেকে নেই। আমাদের এত প্যারা নেওয়ার কী আছে?

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। এতে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। এ ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও সিলিন্ডারের ব্যবহারসহ ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব সিলিন্ডার আবার বিক্রি হচ্ছে পাড়া-মহল্লায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সিলিন্ডার ন্যূনতম ২০ বছর ব্যবহার করার কথা থাকলেও ১০ বছর অন্তর এটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া, এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় রেগুলেটর ও বাল্ব পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের উদাসীনতায় প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ঘটনা।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, ২০২৪ সালে শুধু গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ, বিস্ফোরণ, লাইন লিকেজের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ২১৩টি। এর মধ্যে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০৪টি, বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি আর সরবরাহ লাইনের লিকেজ থেকে অগ্নিকা- ঘটনা ঘটেছে ৪৬৫টি। আর এতে ক্ষতির হয়েছে ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৪ টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে দেশজুড়ে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকা- ঘটেছে।

এসব অগ্নিকা-ে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। নিহত হয়েছেন ১০২ জন, আহত হয়েছেন ২৮১ জন। যার মধ্যে গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে ৭৭০টি, গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ১২৫টি এবং বাজি পোড়ানো থেকে ৮৭টি আগুনের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান মতে, গত দুই বছরে দেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ১৬৯টি। যদিও সিলিন্ডার বিস্ফোরণের এ পরিসংখ্যানকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।

চলতি বছরের শুরুতেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে অগ্নিকা-। এর মধ্যে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের আগুনে মারা গেছেন ৪৬ জন। গত বছরের মার্চে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে ৩২ জন দগ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলিন্ডারের বাল্বের লিকেজ থেকেই ঘটেছে এ বিস্ফোরণ। এ ক্ষেত্রে বাল্বের নব ঠিকঠাকমতো লাগানো হয়নি বলেও দাবি করা হয়। কিন্তু মানহীন রেগুলেটরের কারণেই সিলিন্ডারের মুখ ঠিকমতো লাগছিল না উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অগ্নিদগ্ধ এক রোগীর স্বজন বলেন, বারবার চেষ্টা করেও বাল্ব লাগানো যাচ্ছিল না। আর তাই গ্যাসের লিকেজ হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে কাকে যে দায়ী করব তা বুঝতে পারছি না।

তবে পাড়া-মহল্লায় এসব দোকান কোনোভাবেই থাকতে পারে না উল্লেখ করে বিস্ফোরক পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশে গ্যাস লিকেজ থেকে দুর্ঘটনা ঘটলেও সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা খুবই বিরল। তারপরও পাড়া-মহল্লায় এগুলো বিক্রি কোনোমতেই কাম্য নয়।

লোয়াবের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। এ গ্রাহকের একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের। এ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখের বেশি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখের বেশি। পাশাপাশি দেশেও সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করেছে দেশে নির্মিত সিলিন্ডার। কিন্তু এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গ্যাসসংকটসহ নতুন করে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রান্নার কাজের জন্য এলপিজি সিলিন্ডার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সরকারের পক্ষ থেকে এলপিজির সিলিন্ডার ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সিলিন্ডার গ্যাস যথাযথ ব্যবহার না জানায় ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকা-। অগ্নিকা-ের ফলে মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। যারা বেঁচে আছেন তারাও পোড়া শরীরের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। আবার অনেকে যন্ত্রণা সইতে না পেরে মৃত্যুর কাছে হার মানছেন। 

এ ক্ষেত্রে তদারকির পর্যাপ্ত অভাব রয়েছে বলে স্বীকার করছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন অনুমোদনবিহীন বিক্রেতাদের ওপর কার্যকর নজরদারি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এ বিষয়ে বিইআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দেশে এলপিজির ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে, কিন্তু জনবল ও কাঠামো সেই হারে বাড়েনি। ফলে মাঠপর্যায়ে মনিটরিং দুর্বল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ‘এলপিজি রিটেইল বিক্রেতা নীতিমালা’ প্রণয়ন ও প্রয়োগ না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা অনিবার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম হোসেন বলেন, যেকোনো দাহ্য পদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা মান বজায় রাখা হয়। বাংলাদেশেও একই রকম কাঠামো তৈরি করা জরুরি।

তবে সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এলপিজি রিটেইল ব্যবসার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের খসড়া প্রস্তুত হয়েছে, তবে সেটি এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নীতিমালা কার্যকর হলে অনুমোদনবিহীন দোকানগুলো চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে। এতে করে দুর্ঘটনাও কমে যাবে বলে আশা করেন তিনি।

গ্যাস সংকটসহ নতুন করে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রান্নার কাজের জন্য এলপিজি সিলিন্ডার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সরকারের পক্ষ থেকে এলপিজির সিলিন্ডার ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সিলিন্ডার গ্যাস যথাযথ ব্যবহার না জানায় ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকা- ও প্রাণহানির ঘটনা।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!