বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলার ইতিহাস গড়েছেন মুশফিকুর রহিম। গতকাল মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমেই ইতিহাসের অংশ হয়ে যান এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। টেস্ট ইতিহাসে ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন মুশফিক। ইতিহাস গড়ার দিন ম্যাচ খেলতে নামার সময় মুশফিককে আবেগ ও গৌরবময় আয়োজনে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বিশেষ টেস্টে দুই হাতে রান করেছেন মুশফিকও। মুশফিকের শততম টেস্টের প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯২ রান তুলে বাংলাদেশ। ৯৯ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। শততম টেস্ট শতকে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য আর মাত্র এক রানের অপেক্ষায় এই উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান।
আইরিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি হয়ে উঠেছে মুশফিকের ম্যাচ। তার শততম টেস্ট ঘিরে রোমাঞ্চের জোয়ার বইছে। বিশেষ দিনে ব্যাট হাতে শতকটা পেলে প্রাপ্তির পূর্ণতায় টইটম্বুর হতো মুশফিকের। ইনিংসের শুরু থেকেই এদিন মুশফিক ছিলেন বেশ সতর্ক। ১৮৭ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি মেরেছেন স্রেফ পাঁচটি। আজ দ্বিতীয় দিন সকালে এক রান করতে পারলে শততম টেস্টে শতরান করা ১১তম ক্রিকেটার হবেন তিনি।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ আবারও ভালো শুরু পায় সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে। কোনো বিশেষজ্ঞ পেসার ছাড়াই একাদশ সাজানো আইরিশদের বোলিংয়ের সূচনা করেন দুই অলরাউন্ডার জর্ডান নিল ও কাটির্স ক্যাম্ফার। তবে তেমন কোনো প্রভাব তারা রাখতে পারেননি। বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি অবশ্য আগের টেস্টের মতো অতটা বড় হয়নি জুটি। দুজনের কেউ বড় করতে পারেননি ইনিংস। আউটের ধরন যদিও ছিল ভিন্ন। ম্যাকব্রাইনের দারুণ একটি ডেলিভারিতে ৩৫ রানে এলবিডব্লিউ হন সাদমান। জুটি থামে ৫২ রানে। এরপর ম্যাকব্রাইন ও ম্যাথু হামফ্রিজের আঁটসাঁট বোলিংয়ে টানা ১০ ওভার বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ। এতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন জয়। ম্যাকব্রাইনকে ক্রিজ ছেড়ে মেরে ৩৪ রানে ধরা পড়েন তিনি মিড অফে। একটু পরই বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিজে যাওয়ার একটু পরই দারুণ শটে ছক্কা মারেন তিনি ম্যাকব্রাইনকে।
কিন্তু ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হয়ে যান তিনি পরের বলেই। ৯৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন কিছুটা চাপে। সেই চাপ আরও বাড়তে পরত, যদি ম্যাকব্রাইনের বলে ২৩ রানে মুমিনুলের ক্যাচ না পড়ত। জীবন পেয়ে মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন মুমিনুল। ক্রমে সরে যায় চাপ। মুমিনুল আরেক দফা রক্ষা পান ৪৯ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। দুবার জীবন পেয়েও সেঞ্চুরি কাছে যেতে পারেননি মুমিনুল। চা বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই তার ইনিংস শেষ হয় ৬৩ রানে। বাকি সময়টায় অনায়াসেই খেলে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়ে তোলেন মুশফিক ও লিটন কুমার দাস। তিন স্পিনারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করে ফিল্ডার ছড়িয়ে মাঠ সাজিয়ে ব্যাটসম্যানদের বড় শট খেলতে প্রলুব্ধ করেন আইরিশ অধিনায়ক।
কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি খুব একটা। দিনের শেষ আধঘণ্টায় উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে থাকে মুশফিক শতরানের কাছে এগিয়ে যাওয়ায়। ৮০ ওভার শেষে আইরিশরা যখন দ্বিতীয় নতুন বল নেয়, তার রান তখন ৮১। তিনি যখন ৯০ স্পর্শ করেন, ওভার বাকি তখনো ৬টি। কিন্তু শেষদিকে আইরিশরা সময় ক্ষেপণের পথ বেছে নেন। মুশফিকও কোনো তাড়াহুড়ো করেননি। শেষ ওভার শুরুর সময় তার প্রয়োজন ছিল তিন রানের। স্ট্রাইকে ছিলেন তিনিই। ওভারের তৃতীয় বলে তিনি পান সিঙ্গল। পরের বলে লিটন নেন এক রান। মুশফিকের সম্ভাবনা জেগে ওঠে আবার। কিন্তু পঞ্চম বলে কেবল এক রানই নিতে পারেন তিনি। শেষ বলটি খেলেন লিটন। তিনি অপরাজিত রয়ে যান ৪৭ রানে।

