শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০৬:১০ এএম

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যা

চুরি করে ধরা পড়ায় পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার কথায় হত্যা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০৬:১০ এএম

চুরি করে ধরা পড়ায় পুলিশে  ধরিয়ে দেওয়ার কথায় হত্যা

  • সঙ্গে নিয়ে আসেন ছুরিও
  • হত্যার পর বাসা থেকে ল্যাপটপ ও স্বর্ণালঙ্কারসহ পালিয়ে যান
  • আগেও চুরির অভিযোগে জেলে গিয়েছিল

মোহাম্মদপুরের আজিজুল ইসলাম ও লায়লা আফরোজা দম্পতির বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে যোগদানের তিনদিনের মাথায় চুরি করেন আয়েশা। গৃহকর্ত্রী লায়লার চোখে চুরির বিষয়টি ধরাও পড়ে। পরদিন কাজে আসার পর বাসায় চুরির অভিযোগ তুলে একটি কক্ষে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয় আয়েশাকে। পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ারও ভয় দেখানো হয়। আর এ ক্ষোভ থেকেই গৃহকর্ত্রী লায়লা ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন আয়েশা। হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া আয়েশাকে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য পেলেও পুলিশ আরও কারণ খুঁজছে। পুলিশের ভাষ্য, শুধু চোর অপবাদের ক্ষোভ থেকে এমন হত্যা হয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। যেভাবে মা ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে ভিন্ন কোনো কারণও থাকতে পারে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, হত্যাকা-ের পর থেকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আসামি সন্দেহভাজন আসামি গৃহকর্মী আয়শাকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। গত দুদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। গতকাল বুধবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আয়েশা তার শ^শুরবাড়িতে পালিয়ে ছিল। এ সময় তার স্বামী রাব্বীকেও আটক করা হয়। তিনি আরও বলেন, দুজনকে (আয়েশা ও রাব্বী) নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে পুলিশ সদস্যরা রওনা হয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য হয়তো সামনে আসতে পারে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আয়েশাকে চুরির অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্ষোভে সে মা-মেয়েকে হত্যা করেছে। হত্যাকা-ে আয়েশা একা জড়িত ছিল নাকি আরও কেউ ছিল অথবা হত্যাকা-ের ঘটনার রহস্য অন্য কিছু কি না, তা-ও যাচাই-বাছাই চলছে।

গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে মা-মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ তখন জানিয়েছে, নাফিসার গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং লায়লার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে আঘাত করা হয়। ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই গৃহকর্মী বোরকা পরে বাসায় এসেছিল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার পরনে ছিল নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস। নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম ঘটনার দিন সকালে যথারীতি স্কুলে গিয়েছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় এসে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ দেখতে পান। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন আজিজুল ইসলাম।

পুলিশের ভাষ্য, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো মা ও মেয়েকে হত্যাকা-ের মাত্র চার দিন আগে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয় আয়েশা। কাজে যোগদানের তৃতীয় দিনে বাসায় চুরি করার অভিযোগ ওঠে আয়েশার বিরুদ্ধে। পরদিন আয়েশা প্রতিদিনকার মতো কাজে এলে চুরির বিষয়ে আয়েশাকে শাসায় গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ। একপর্যায়ে আয়েশাকে একটি রুমেও আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই অপবাদ ও আটকে রাখার চেষ্টা থেকে রাগ ও ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে হত্যা করে। হত্যার পর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে আয়েশা পালিয়ে চলে যায় বরিশালের ঝালকাঠি এলাকায়। গতকাল বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে আয়েশাকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা যায়।

আজিজুল ইসলাম বলেন, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে ঘটনার চার দিন আগে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেয়। সে সকালে বাসায় এসে কাজ করে চলে যেত। এর মধ্যে রোববার বাসার মূল দরজার চাবি হারিয়ে যায়। সন্দেহ হলেও গৃহকর্মীকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, মেয়েটির পরিচয় ও ফোন নম্বর চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বলেছিল, আগুনে পুড়ে তার মা-বাবা মারা গেছেন। সে-ও আগুনে দগ্ধ হয়েছিল। এসব বলে পরিচয় ও ফোন নম্বর দেয়নি।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সুরতহালের সময় লায়লা আফরোজের শরীরে অন্তত ৩০টি জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাম গালে ৩টি, থুতনিতে ৪টি, গলার নিচে ৫টি, বাম হাতে ৩টি, দুই হাতের কবজিতে মোট ৩টি, বুকের বাম পাশে ৯টি, পেটের বাম পাশে ২টি এবং তলপেটে ১টি গভীর আঘাত রয়েছে। মেয়ে নাফিসার গলা ও বুকের দুই পাশসহ শরীরে ৬টি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। ঘটনাস্থল থেকে দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এর একটি সাধারণ সবজি কাটার ছুরি হলেও অন্যটি একটি বিশেষ ধরনের ‘সুইচ গিয়ার’। এটি আঙুলের মধ্যে এমনভাবে আটকে ব্যবহার করা হয়, যাতে আঘাতের সময় হাত থেকে ফসকে না যায়। এই ধরনের অস্ত্র সচরাচর বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা হয় না। ঘাতক সম্ভবত বাইরে থেকেই পরিকল্পিতভাবে এই অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। অস্ত্রের ধরন এবং ব্যবহারের কায়দা দেখে পুলিশের ধারণা, ঘাতক প্রশিক্ষিত অথবা সে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত (সাইকোপ্যাথ) হয়ে অতিরিক্ত ক্ষোভ থেকে এমন কা- ঘটিয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বুধবার আয়েশাকে গ্রেপ্তার অভিযানের সময় তার শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি  থেকে লুট করা একটি ল্যাপটপ ও স্বর্ণ গয়নাসহ কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন  জানান, চুরি দেখে ফেলা কিংবা চুরির অপবাদ দেয়ায় জোড়া খুনÑ দুটিই বলা যায়। ঘটনার আগের দিন আয়েশা ওই বাসা থেকে ২ হাজার টাকা চুরি করেন। যা নিয়ে নিহত লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান। আয়েশা চুরির কথা স্বীকার করেনি। ওইদিন বাসা থেকে বের হয়ে গেলেও ঘটনার দিন একটি ছুরি সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় যায় আয়েশা। ফের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে আয়েশা ছুরিকাঘাতে মা-মেয়েকে হত্যা করে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!