শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১২:৩২ এএম

গাজায় মানবিক বিপর্যয়

গাজায় চরম দুর্দশা

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১২:৩২ এএম

গাজায় চরম দুর্দশা

শীতকালীন ঝড়ের প্রভাবে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ভারি বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাজা উপত্যকার শরণার্থীশিবিরগুলো। বুধবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত একটানা বর্ষণে শত শত পরিবারের তাঁবু ডুবে গেছে। দুই বছরের ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষের দুর্দশা আরও গভীর করেছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

আনাদোলু এজেন্সির তথ্য মতে, রাফাহ, খান ইউনিস ও মধ্য গাজার বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার তাঁবু প্লাবিত হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, শুধু রাফাহতেই কয়েক ডজন তাঁবু সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রায় আড়াই লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ ঠান্ডা এবং জীর্ণ তাঁবুর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ঝড়ের প্রভাবে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস মঙ্গলবারই জানিয়েছিল যে, একটি শক্তিশালী মেরু নি¤œচাপ বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অঞ্চলজুড়ে প্রবল প্রভাব ফেলবে, যা লাখ লাখ শরণার্থীর জন্য গুরুতর হুমকি। ফলে আগাম সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়নি।

প্রবল বর্ষণ ও ঝোড়ো বাতাসে অনেক তাঁবু ছিঁড়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ঢুকে নষ্ট করেছে বিছানা, পোশাক থেকে খাদ্যসামগ্রী পর্যন্ত। রাতের আঁধারে পানি ও কাদার মধ্যে আটকা পড়েছেন হাজারো মানুষ। পর্যাপ্ত খাবার, জ্বালানি বা উষ্ণতার কোনো ব্যবস্থা নেই। খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলে বহু পরিবারকে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগের মধ্যেই গাজার এক প্লাবিত তাঁবুতে মৃত্যুবরণ করেছে এক শিশুকন্যা। শিশুটির মা বলেন, ‘বৃষ্টি থামছিল না, ঠান্ডা বাড়ছিল। একসময় দেখি আমার মেয়েটা আর নড়ছে না।’ একই সময়ে উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন নারী নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জরুরি কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ জানিয়েছেন, ঝড় বায়রনের আঘাতে গাজার হাজার হাজার পরিবার এখন ঠান্ডা, অনাহার ও আশ্রয়হীনতার মুখে। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা এখনো অব্যাহত দুঃস্বপ্নে বন্দি।’ জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানায়, ৭৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ বাস করছে, যাদের বেশির ভাগই বন্যার মারাত্মক ঝুঁকিতে। শুধু ৭ ও ৮ ডিসেম্বরেই নতুন করে ৩,৫০০-এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সহায়তা সংস্থাগুলো ঝুঁঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে। বালির বস্তা, পানিনিষ্কাশন সরঞ্জাম এবং সীমিত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এসব সাহায্য অপ্রতুল বলেই মনে করছে জাতিসংঘ।

এদিকে রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আলজাজিরা আরবির বরাতে জানা গেছে, রাফাহ সীমান্ত শহরের উপকণ্ঠে ইসরায়েলি সৈন্যরা গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি অঞ্চলেও ভারি বৃষ্টিতে ডজনখানেক তাঁবু ডুবে গেছে। সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, প্লাবিত তাঁবু থেকে সাহায্য চেয়ে শত শত কল পাচ্ছেন তারা।

এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই পশ্চিম তীরে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন কার্যক্রম। আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার পশ্চিম তীরে নতুন ৭৬৪টি বসতি-বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। রামাল্লার হাশমোনাইমে ৪৭৮টি, বেইতার ইল্লিতে ২৩৩টি এবং গিভাত জেএভে ৫৬টি বাড়ি নির্মাণের এই অনুমোদন আন্তর্জাতিক আইন ও জনমত উপেক্ষার নতুন উদাহরণ।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নতুন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরে মোট ৫১ হাজারের বেশি বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

এদিকে লেবানন সীমান্তেও উত্তেজনা থামছে না। দক্ষিণ লেবাননের সারদা এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউএনআইফিলের টহলদলের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ইউএনআইফিল তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, শান্তিরক্ষীদের ওপর ১০ রাউন্ড করে মোট পাঁচবার গুলি ছোড়া হয়, যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ১৭০১-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, জাতিসংঘ এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছে।

২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও লেবাননে এখনো নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইসরায়েল এক হাজারের বেশি হামলা চালিয়েছে, এতে ৩৩৫ জন নিহত এবং ৯৭৩ জন আহত হয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও এখনো পাঁচটি সীমান্ত চৌকিতে তারা অবস্থান বজায় রেখেছে।

গাজার মানবিক বিপর্যয়, পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ এবং লেবানন সীমান্তে উত্তেজনাÑ সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। গাজায় বৃষ্টি, ঠান্ডা, ক্ষুধা ও যুদ্ধÑ চার দিক থেকে চাপের মুখে পড়ে লাখো বাস্তুচ্যুত মানুষ আজ গভীর মানবিক দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!