শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ও গণভোট

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম

১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ও গণভোট

  • ৩০০ আসনে একযোগে চলবে ভোটগ্রহণ
  • মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর
  • যাচাই-বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি
  • আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত
  • চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি
  • নির্বাচনি প্রচার শুরু ২২ জানুয়ারি, শেষ ১০ ফেব্রুয়ারি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচার করা হয়েছে। এতে তিনি আসন্ন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেন। এ সময় সিইসি জানান, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একই দিন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটও হবে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি, প্রচার শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায়। ১২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করল ইসি। এর মাধ্যমেই সব সংশয় কাটিয়ে বাজল জাতীয় নির্বাচনের বাঁশি।

শুরুতে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপিসহ কিছু দল। গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দুজন একমত হন।

এরপর থেকে সরকার বার বার বলে আসছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ইসিও সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়। এর মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ দুটি ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন সিইসি। ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারে। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫৬টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকা- নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকা দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। নিবন্ধিত অন্য দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এর বাইরে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী নির্বাচনই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো নির্বাচন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হচ্ছে। দুটি ভোটের সময় ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি। সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এবার ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

অন্যদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার জানিয়েছে, তপশিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনি পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

দেশের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন আর কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উৎসুক পুরো দেশের মানুষ। রাজধানী থেকে তৃণমূল সর্বত্র বিরাজ করছে ভোটের আবহ। আর এই ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য বহুল প্রত্যাশিত তপশিল ঘোষিত হওয়ার মাধ্যমে মূলত শুরু হলো ভোট উৎসবের যাত্রা। একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় এই নির্বাচনকে বিশেষ বলে আখ্যায়িত করছেন বিশ্লেষকরা। তবে দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ম্যাজেস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবেন দক্ষ বাহিনী। এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র। দুটি ব্যালটে ভোটগ্রহণের সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়লেও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে তা ২ লাখেরও বেশি হতে পারে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গত বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন সিইসিসসহ নির্বাচন কমিশনাররা। সব প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতি সাপেক্ষে ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে কমিশন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, কমিশনের ঘোষিত নির্বাচনি রোডম্যাপ অনুযায়ী, প্রায় সব প্রস্তুতিমূলক কাজই সম্পন্ন করা হয়েছে। সংলাপ, আইনি সংস্কার, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্তকরণ, ভোট কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন শেষ হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। একই ভোটারের দুটি ব্যালটে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে ইসির বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভোটকক্ষের গোপন কক্ষ বৃদ্ধি এবং ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো নিয়েও চলছে আলোচনা।

সম্পন্ন হয়েছে মক ভোটিংও। ইসি বলছে যেহেতু একই দিনে গণভোট আর জাতীয় সংসদের নির্বাচন তাই সম্প্রতি দুই ভোট এক সঙ্গে করার জন্য মক ভোটিংয়ের আয়োজন করেছিল ইসি। এতে ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশের মতো। মক ভোটিংয়ে উঠে আসা পর্যবেক্ষণ বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ বিষয়ে বলেন, দুই ভোট এক সঙ্গে করার জন্য ভোটের সময় বাড়ানো হয়েছে। বাড়নো হয়েছে বুথও। অন্যান্য বছরের নির্বাচনি সময়ের পরিবর্তে চলতি বছর সকাল সাড়ে ৭টায় ভোট শুরু হবে এবং ৪টার পরিবর্তে সাড়ে ৪টায় শেষ হবে।

চূড়ান্ত হয়েছে ভোটার তালিকাও। ইসির সর্বশেষ তথ্যমতে, এবার চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন যুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে এক হাজার ২৩৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন। পুরুষ ভোটার দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন। আর নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন।

আলোচনায় রয়েছে পোস্টাল ব্যালটে ভোটও। এবারই প্রথম উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তিন ক্যাটাগরির (আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, ভোটের দায়িত্বে থাকা ও সরকারি কর্মচারীরা) ব্যক্তিরা এই সুযোগ পাচ্ছেন। যার নিবন্ধন এরই মধ্যে ২ লাখের ওপর ছাড়িয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!