অভাবের সংসার। মাথার ওপর ঋণের পাহাড়। সুদের টাকা দিতে না পেরে এক সময়কার পরিশ্রমী কৃষক হাবিবুর রহমান জীবনযুদ্ধে এতটাই হেরে যান যে, বাধ্য হয়ে নিজের আদরের দুই বছরের মেয়েকে বিক্রি করে দেন চিন্তা। বুক ফাটলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেন না, কিন্তু চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন তার স্ত্রী। আর সেই কান্নাই যেন ডেকে আনে প্রতিবেশীদের মানবতা।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চর সিন্দুর্না গ্রামে। হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জমি নেই। বর্গা নিয়ে চাষ করি। গত মৌসুমে পেঁয়াজ, বাদাম আর ভুট্টার আবাদ করতে বন্ধুর কাছ থেকে সুদে ৩ লাখ টাকা নিই। ফসল বিক্রি করে ১ লাখ টাকা শোধ দিলেও এখনো সুদসহ আরও ৪ লাখ টাকা চাইছে। প্রতিদিন চাপ দিচ্ছে, কই গিয়ে টাকা জোগাড় করব? তাই ভাবলাম, মেয়ে তো ছোট কেউ নিতে চাইলে হয়তো কিছু টাকা পেয়ে বাকি শোধ দিতে পারব।’
তার স্ত্রী জান্নাতুন নাহার মেয়েকে ছাড়তে নারাজ। ঘরের কোণে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মেয়ের বিক্রির কথা শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। বাধা দেন মেয়েকে নেওয়ার চেষ্টা করা লোকদের।
প্রতিবেশী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘স্ত্রীর কান্না শুনে আমরা ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, হাবিবুর সত্যিই মেয়েকে দিতে চাইছে। আমরা সবাই মিলে বাধা দিলে সে আর পারেনি।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। পরে বিষয়টি জানানো হয় সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলামকে। তিনি জানান, ‘ঘটনা জানার পর পরিবারটিকে পরিষদে ডেকে আনি। পাওনাদারদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছি। সেই সঙ্গে হাবিবুরের স্ত্রীকে ভিজিডি কার্ড দিয়েছি যেন অন্তত খাদ্যের কষ্ট না হয়।’
একজন অসহায় বাবার এমন সিদ্ধান্ত আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সামনে অনেক প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। তবে সময়মতো প্রতিবেশীদের প্রতিবাদ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা, এই ঘটনাটিকে অন্তত মানবতার জয় হিসেবে বাঁচিয়ে রেখেছে।