শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শফিকুল ইসলাম খোকন, পাথরঘাটা 

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৫:১৪ এএম

৭৯ বছরেও পেটের দায়ে কাগজ কুড়ান আজিজ

শফিকুল ইসলাম খোকন, পাথরঘাটা 

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৫:১৪ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাত গভীর হলে শহর ঘুমিয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, মানুষ ফিরে যায় নিজেদের ঘরে। কিন্তু শহরের অন্ধকার গলিতে তখনো হাঁটেন এক বৃদ্ধ, হাতে একগুচ্ছ পুরোনো কাগজ। তাকে দেখে হয়তো কেউ বলবে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীরে তার বিশ্রাম দরকার। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। কারণ আজিজ খান থেমে যাননি, থামার উপায়ও নেই তার।

৭৯ বছর বয়সে যখন অধিকাংশ মানুষ জীবনকে বোঝেন বিছানা আর ওষুধের হিসাব-নিকাশে, তখন আজিজ খান বেরিয়ে পড়েন কাগজ কুড়াতে। কারণ, পেটের দায় বড় দায়, দায়িত্বের বোঝা তার কাঁধে আজও চেপে বসে আছে। পরিবার চালানোর দায়িত্ব, বেঁচে থাকার সংগ্রাম, আর আত্মমর্যাদার লড়াই তাকে প্রতিদিন নতুন করে পথে নামায়।

আজিজ খান বাড়ি পাথরঘাটা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। একসময় মুদির দোকান ছিল, সংসারও চলত বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু কিস্তিতে দেওয়া মালামাল আর বাকি টাকার চাপে ডুবে যায় তার ব্যবসা। একসময় দেনায় জর্জরিত হয়ে সবকিছু হারিয়ে ফেলেন। সেই থেকেই শুরু হয় কাগজ কুড়ানোর জীবন। এই একজোড়া হাত, আর কিছু ইচ্ছাশক্তিই তার সম্বল।

প্রতিদিন ১০-১২ কেজি কাগজ কুড়িয়ে সেগুলো জমিয়ে রাখেন। পরে প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। দিনে গড়ে ১০০-১৫০ টাকা রোজগার হয়। এতেই কোনোভাবে চলে সংসার। সেই আয় দিয়েই দুজনের খাবার চলে, আর বয়স্কভাতা দিয়ে কেনা হয় ওষুধ।

আজিজ খানের পরিবারেও কষ্টের ছাপ। তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, দুই ছেলে নিজেদের সংসার চালাতেই হিমশিম খান। একজন মাছ ধরার শ্রমিক, আরেকজন দিনমজুর। বাবার দিকে তাকানোর সুযোগ তাদের নেই। তাই জীবনের এই শেষ প্রান্তেও আজিজ খান কাজ করছেন কাগজ কুড়িয়ে।

শরীরের চামড়ায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট, হাঁটা-চলার ভঙ্গিতেও কষ্ট ফুটে ওঠে। তবু মুখে ক্লান্তি নেই, নেই হতাশার গন্ধ। বরং মুখে খোলামেলা হাসি, গলায় দৃঢ়তা, ‘কারো কাছে হাত পাততে হয় না, এটাই বড় সুখ। মানুষ হয়ে মানুষের ঘাড়ে না চেপে চলাটাই তো সম্মান।’

পাথরঘাটা ইসলামিয়া ফার্মেসির মালিক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আজিজ চাচা অনেক বছর ধরে আমার দোকান থেকে কাগজ নেয়। তার মতো পরিশ্রমী, আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ আমি কম দেখেছি। আমরা চেষ্টা করি, তাকে সহযোগিতা করতে।

আজিজ খান কোনো একক চরিত্র নন। তিনি আমাদের সমাজের এক প্রতীক, যিনি নিঃশব্দে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ না করেই, দিনের পর দিন বয়ে চলেছেন জীবনের বোঝা। কাগজ কুড়িয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেও, তার মানসিক দৃঢ়তা আর আত্মসম্মান অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ।’

এ সমাজে হয়তো অনেকেই তাকে চোখে দেখে না, কিন্তু আসল যোদ্ধা তো সেই, যে সবকিছু হারিয়ে ফেলেও নিজের সম্মানটুকু ধরে রাখতে জানে।

আজিজ খানদের গল্প লেখা হয় না, তারা খবর হয় না, কিন্তু তারা সমাজের আসল আয়না। তাদের প্রতি সম্মান জানানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। কারণ একদিন আমরাও বৃদ্ধ হবো, আমরাও চাইব, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!