রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শেখ সেকেন্দার আলী, পাইকগাছা

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম

ডিঙি নৌকায় বৃদ্ধ দম্পতির সংসার

শেখ সেকেন্দার আলী, পাইকগাছা

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম

নৌকায় সংসার পেতেছেন সুখেন বিশ্বাস আর তার স্ত্রী অন্নাদেবী (ছদ্মনাম)।     ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নৌকায় সংসার পেতেছেন সুখেন বিশ্বাস আর তার স্ত্রী অন্নাদেবী (ছদ্মনাম)। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ভোরের আলো পূর্ব আকাশে ঠিকরে ওঠার আগেই কপোতাক্ষের ঢেউয়ে দুলতে থাকে একটি পুরোনো ডিঙি নৌকা। সে নৌকায় সংসার পেতেছেন সুখেন বিশ্বাস (৭০) আর তার স্ত্রী অন্নাদেবী (ছদ্মনাম)।

কোনো কূলেই ঠাঁই হয়নি তাদের, তাই এই ডিঙি নৌকাই তাদের শেষ অবলম্বন। নদীর বুকেই ঘর, নদীর ঢেউয়েই জীবন আর নদীর গভীরতাই তাদের ভালোবাসার সাক্ষী।

একসময় তাদেরও ছিল জমি, বাড়ি, বাগ-বাগিচা, গরু-ছাগল, সুখের সংসার। কিন্তু রাক্ষুসী কপোতাক্ষ গিলে খেয়েছে সব। নদীভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন তারা। সেই থেকে একমাত্র জীবনসঙ্গীকে নিয়ে সুখেন বিশ্বাস নেমেছেন জীবনের আরেকটি যুদ্ধে, ভাসমান যুদ্ধ। এখন সেই ডিঙি নৌকাই তাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই।

দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কপোতাক্ষ, শালিখা আর শিবসা নদীতে মাছ ধরে জীবন চালান তারা। কোথাও নোঙর, কোথাও নতুন যাত্রা। আজ বোয়ালিয়া, কাল শিববাটি, ভাসতে ভাসতেই জীবন কাটে। মাছ যা জোটে, তা-ই বিক্রি করে চলে কোনোমতে খাওয়া। সব দিন সমান যায় না। কোনো দিন আধপেটা, কোনো দিন শুকনো খাবারে দিন কেটে যায়। চিঁড়া, মুড়ি, বিস্কুটই ভরসা।

তবুও হতাশ নন তারা। চোখে-মুখে ক্লান্তির রেখা থাকলেও একে অপরের প্রতি অটুট বিশ্বাস আর অপার ভালোবাসা তাদের চালিত করে। অন্নাদেবী বলেন, ‘আমার সব ছিল, নদী সব কেড়ে নিয়েছে। তবুও চাই স্বামীর শাঁখা-সিঁদুর নিয়ে যেন মরতে পারি।’

পাশে বসে থাকা সুখেন চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘বাবু, দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখন আর আগের মতো মাছও পাওয়া যায় না। যেতে হবে অনেক দূরে। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।’

সুখেন বিশ্বাসের কণ্ঠে ফুটে ওঠে ক্ষোভ আর হতাশা। একসময় সরকারি ঘরের আশায় দরখাস্ত দিয়েছিলেন, অনেক তদবিরও করেছেন। কিন্তু প্রাপ্য তালিকায় ঠাঁই হয়নি তার। আজ বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই মানুষটির পক্ষে মাছ ধরা আর সম্ভব হচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈরী আবহাওয়া, জীবনের ক্লান্তি, সব কিছু মিলিয়ে শেষ বয়সে দাঁড়িয়েছেন অনিশ্চয়তার মুখে।

এ সমাজ, এই রাষ্ট্র তাদের কতটুকু মনে রেখেছে? ভিটামাটি হারানোর দায় কি শুধুই প্রকৃতির? নাকি আমরা কেউই হাত বাড়াইনি বলে আজও তাদের ভেসে থাকতে হচ্ছে? একজন প্রবীণ নাগরিক, জীবনভর পরিশ্রম করা এক মানুষ ও তার স্ত্রী যদি শেষ বয়সে একটু ঘরের আশায় চেয়ে থাকেন, সেটা কি এতটাই কঠিন?

সুখেন-অন্নাদার চোখে কোনো জটিলতা নেই, নেই বিলাসের বাসনা। শুধু একটি ঘর, একটি খোলা আকাশের নিচে একটু নিরাপদে মরার মতো আশ্রয়, যেখানে মৃত্যু এলে তারা হাতে হাত ধরে শেষ নিশ্বাস নিতে পারেন। এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো কি আমাদের কর্তব্য নয়?

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!