পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রায় ৬ বছর পর গত রোববার বিকেল ৪টা থেকে পাম্পিংয়ের মাধ্যমে তেল সরবরাহ শুরু হয়। এই পাইপলাইন দিয়ে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ডিপোতে প্রতিদিন পাঠানো হচ্ছে ৬ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল। ঘণ্টায় সরবরাহ করা হচ্ছে ৩০০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল।
পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েলকে এই পাইপলাইন দিয়ে তেল সরবরাহ করা হবে। যদিও বিপিসির কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ঢাকায় পাইপলাইনে তেল সরবরাহের মাধ্যমে বিপুল টাকার পরিবহন ব্যয় কমার পাশাপাশি সময়েরও সাশ্রয় হবে। কমবে তেল চুরিসহ সিস্টেম লস।
কিন্তু এতে করে নৌপথে তেল পরিবহন কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। এতে করে বর্তমানে বিদ্যমান প্রায় ১২০টি আন্তর্জাতিক মানের ট্যাংকার বিকল হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা। বেকার হয়ে যাবেন এই খাতে কাজ করা হাজারো শ্রমিক।
জানা যায়, চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনের কাজটি ২০১৮ সালে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত হয়। প্রকল্পটির আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ও ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা এবং করোনাকালে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। জমি অধিগ্রহণ খরচও বাড়ে। ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই গত রোববার প্রথমবারের মতো ৬ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
এই প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকায় তেল সরবরাহ শুরু দেশের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। এতে দেশের অর্থ সাশ্রয় ও সময় বাঁচবে। সবচেয়ে বড় বিষয়Ñ ঝুঁকিমুক্ত হলো সেক্টরটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল চট্টগ্রামে খালাস করা হয়। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পর পরিশোধন করা হয় একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এ ছাড়া আমদানি করা পরিশোধিত জ্বালানি তেলের একটি অংশ প্রাথমিক অবস্থায় মজুদ রাখা হয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডিপোতে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লরিযোগে (ভাউসার) সরবরাহ করা হতো জ্বালানি তেল। ফলে জ্বালানি তেল পরিবহনে অপচয় কমানো আর সময় বাঁচাতে ২০১৮ সালে শুরু হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ।
দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়। এই তেলের ৪০ শতাংশই ব্যবহৃত হয় ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক, নৌ ও রেলপথে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনকালে বিভিন্ন সময় লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া যেত। নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনকালে তেল চুরি করে সাগরের পানিতে মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগও বহু পুরোনো। সড়ক ও রেলপথেও ঘাটে ঘাটে তেল চুরির সচিত্র বহু সংবাদ বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সিস্টেম লসের নামে এসব চুরি এবং লোপাটের কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কোটি কোটি টাকার ক্ষতির কবলে পড়ে।
বিপিসির দাবি, এই পাইপলাইন দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ শুরু হওয়ায় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাহাজ মালিকরা এখন মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
তারা বলছেন, বিপিসির আমদানীকৃত সিংহভাগ জ্বালানি তেল যদি চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, তাহলে নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহন সেক্টরটি একটি মৃতপ্রায় সেক্টরে পরিণত হবে।
ফলে হাজার কোটি টাকার ঋণে নির্মিত ট্যাংকার জাহাজগুলো একযোগে বন্ধ হয়ে এ সেক্টর সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হবে এবং শত শত ট্যাংকার জাহাজে নিয়োজিত হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবিক ও সামাজিক সমস্যায় ফেলবে। ৪৪ বছরের আয়ুষ্কাল নিয়ে নির্মিত জাহাজাগুলো মাত্র ৩৬ বছরের আয়ুষ্কালেই শেষ হয়ে যাবে। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দাবি, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে এসব জাহাজ নিয়ে আসে যেখানে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগই সবচেয়ে বেশি।
সংগঠনটি বলছে, জ্বালানি তেল পরিবহনে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন চালুর কারণে এই অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত জাহাজগুলোর মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য বিপিসিতে বাৎসরিক ১৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। এর বিপরীতে এই পাইপলাইন নির্মাণে বিপিসি কর্তৃক এরই মধ্যে খরচ করা হয়েছে ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকা।
আর এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিপিসিকে বছরে খরচ করতে হবে ৭৭৩ কোটি টাকা। যা জাহাজের পরিবহন খরচের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। এই বিপুল পরিমাণ ব্যয়ে নির্মিত পাইপলাইন প্রকল্পটি দেশের জন্য কোনোভাবেই ব্যয় সাশ্রয়ী নয় উল্লেখ করে সংগঠনের নেতারা বলেন, বিপিসির অভিযোগ, জাহাজের মাধ্যমে তেল পরিবহন করা হলে তেলের পরিমাণ ঠিকভাবে বুঝে পায় না এবং এতে করে বিপিসির ঘাটতিজনিত আর্থিক ক্ষতি হয়, যা মোটেই ঠিক না। জাহাজের মাধ্যমে তেল লোডের সময় যে পরিমাণ তেল লোড করা হয় সমপরিমাণ তেল আনলোডের সময় বিপিসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
যেকোনো পরিমাণ তেল ঘাটতির আর্থিক মূল্য তেল পরিবহনের বিল বাবদ সমন্বয় করে রাখা হয় বলেও দাবি করেন তারা। সংগঠনের এক নেতা বলেন, কেবলমাত্র একক পাইপলাইনের উপর নির্ভর করে জ¦ালানি তেলের সরবরাহ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে, অগ্নিকাণ্ড কিংবা নাশকতাজনিত দুর্ঘটনায় পাইপলাইন বিকল হলে পুরো তেল পরিবহন ব্যবস্থা ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। তাই পৃথিবীর যেসব দেশে জলপথ সহজলভ্য সেসব দেশে পাইপালাইনের পরিবর্তে জাহাজের মাধ্যমে তেল পরিবহন করা হয়, যা অত্যন্ত আর্থিক সাশ্রয়ী।
সংগঠনটি দাবি করছে, প্রথমত জ্বালানি তেলের মতো একটি স্পর্শকাতর দাহ্য পদার্থ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা সুদীর্ঘ ২৩৭ কিলোমিটার সঞ্চালনার জন্য যে বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অবশ্যম্ভাবী পরিবেশ বিপর্যয়সহ অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা পর্যালোচনা করা দরকার তা করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে যুক্তিগুলো হলো, কেবলমাত্র একক পাইপলাইনের ওপর নির্ভর করে দেশের প্রধান লোড সেন্টারগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা ভয়াবহ নিরাপত্তাঝুঁকি। পাইপলাইনের দুর্ঘটনার কারণে মানবজীবন ক্ষতির এবং অন্যান্য সম্পত্তির ক্ষতির যে ঝুঁকি তা ট্যাংকারের তুলনায় অধিক।
বর্তমানে ডাবল-হাল ক্লাস ট্যাংকারগুলো অভূতপূর্ব নিরাপদ তেল বহনকারী হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনায় ট্যাংকারের বাইরের অংশে ফুটো হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কোনো তেল বের হয়নি অথবা অন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। এবং ঐ ট্যাংকারের তেল নিরাপদে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই নতুন ট্যাংকারের দুর্ঘটনার হার প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছে।
জানা যায়, পাইপলাইন স্থাপনে মুখ্য যৌক্তিকতা হচ্ছে ব্যয় সাশ্রয়। হিসাব করা হয়েছে জ¦ালানি তেল স্থানান্তরের কারণে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, যা ঠিক না। যখন সিঙ্গেল মুরিং পয়েন্ট (এসপিএম) এবং পাইপলাইন সমুদ্রে নির্মাণ করা হবে, তখন জ্বালানি তেল স্থানান্তরের আর্থিক ক্ষতির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হ্রাস পাবে।
জ্বালানি তেল স্থানান্তরের অন্যান্য ক্ষতি অনেকাংশে কমানো হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে পুরোনো জাহাজগুলো বাদ দেওয়া গেলে এই ক্ষতি অধিকতর কমে যাবে। কিন্তু পাইপলাইন থেকে চুরি যাওয়া জ¦ালানি তেল তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা এই তেল বিক্রির সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবে বাড়বে। এতে কেবলমাত্র ক্ষতির ঝুঁকি বাড়বে না বরং যেকোনো আর্থিক লাভে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
দেশে এমন অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং লোড সেন্টার রয়েছে যেখানে একমাত্র নিরাপদ পরিবহন উপায় হচ্ছে নদীপথ। এই নদীপথ অনেক সাশ্রয়ীও বটে। বিশেষ করে নতুন ডাবল-হাল ক্লাস ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সঞ্চালন সম্পর্কিত অতীত অভিজ্ঞতার বিষয়টিও আলোচ্য চট্টগ্রাম-ঢাকা প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করা হয়নি মর্মে উল্লেখ করে সংগঠনটি দাবি করছে, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের মধ্যে বেলজিয়াম, কানাডা, চীন, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, রাশিয়া, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ আরও কিছু দেশে গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে শুরু করে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল ও গ্যাস সঞ্চালন করা হয়েছে; তার সবগুলোতেই সারা বছরব্যাপী এবং সময়ে সময়ে বেশ ঘন ঘন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও পরিবেশ বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছে। যাতে করে মানবসম্পদ, অর্থসম্পদসহ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধণের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এসব দুর্ঘটনায় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণগুলো থেকে দেখা যায়, প্রায় সবগুলো দেশেই বড় বড় দুর্ঘটনা হয়েছে এবং এতে মূল্যবান সম্পদ, মানবসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণগুলো থেকে লক্ষ্য করা যায়, পাইপলাইনে ক্রমশ প্রাকৃতিক ক্ষয়প্রাপ্তি, বন্যার কারণে জমি সরে গিয়ে পাইপে ফাটল, নির্মাণ ত্রুটি, প্রশাসনিক কারণ, চুরির উদ্দেশ্যে পাইপলাইনে আঘাত, না জেনে সাধারণ মানুষ কর্তৃক মাটি খোদাই, নাশকতা, প্রাকৃতিকভাবে পাইপলাইন ভেঙে পড়া বা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি কারণে পাইপলাইনে ক্ষতিসাধিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সম্পদশালী দেশ হওয়ায় সেসব দেশ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির জন্য এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন।
বিপিসি তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর চাহিদানুসারে আমাদের আন্তর্জাতিক মানের তেলবাহী জাহাজগুলো নির্মাণে এই খাতে আগে থেকে নিয়োজিত পুরোনো জাহাজগুলোর চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আমিন ভুঁইয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গড়পড়তা প্রতিটি ট্যাংকার তৈরি করতে প্রায় ১৩.৫০ থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে এবং এতে এই নতুন বহরে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু জাহাজগুলোতে কাক্সিক্ষত ট্রিপ না পাওয়ায় অনেক জাহাজ মালিকই ব্যাংক ও ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণখেলাপি ও দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন। তার ওপর মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজ বয়সগত কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংগঠন শ্রমিকদের নিয়োগ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এতে করে বেশ বড় রকমের আর্থিক চাপ জাহাজ মালিকদের ওপর পড়ছে। এসব কারণে জাহাজ মালিকরা যখন মারাত্মক সমস্যায় জর্জরিত, সেই সময় বিপিসির আমদানীকৃত সিংহভাগ জ¦ালানি তেল যদি চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবাহিত হয় তবে নৌপথে জ¦ালানি তেল পরিবহন সেক্টরটি একটি মৃতপ্রায় সেক্টরে পরিণত হবে। ফলে হাজার কোটি টাকার ঋণে নির্মিত ট্যাংকার জাহাজগুলো একযোগে বন্ধ হয়ে এ সেক্টরটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হবে এবং শত শত ট্যাংকার জাহাজে নিয়োজিত হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবিক ও সামাজিক সমস্যায় পড়বে।
ব্যবসায়ীদের কিছুটা ক্ষতি হবে বলে স্বীকার করেছেন বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানও। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, পাইপলাইনে বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে যদি শতাংশের হিসাব করা হয়, তাহলে ৪০টি জাহাজ হলেও বেকার হবে। কিন্তু এটা মেনে নিতে হবে। নতুন কোনো প্রযুক্তি যখন আসে, তখন পুরোনোকে অন্যদিকে নিজেদের নিয়োজিত করতে হয়। সাগরে আমাদের জাহাজের অনেক চাহিদা। তারা অন্য কোনো ব্যবসায় নিজেদের নিয়োজিত করবে। এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।
পাইপলাইনের কারণে জাহাজে করে তেল পরিবহন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরকার এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চাইলেই তো আর হুট করে সব ট্যাংকার বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। এটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে। কোনো খাত ক্ষতিগ্রস্ত হোক সরকার এটা চাইবে না। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যা সবার জন্য ভালো হবে সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :