বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৩:১১ এএম

শতবর্ষের ঐতিহ্য খুলনার ইন্দ্রমোহন সুইটস

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৩:১১ এএম

শতবর্ষের ঐতিহ্য খুলনার  ইন্দ্রমোহন সুইটস

শুরুটা হয়েছিল ভৈরব নদের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা খুলনা শহরের বড় বাজারের হেলাতলা রোডের এক গোলপাতার ঘরে, ১৮৯০ সালে। ১৩৩ বছর পর এখনো খুলনা শহরের ঐতিহ্যের কথা উঠলে সগৌরবে উঠে আসে ইন্দ্রমোহন সুইটসের নাম। ইন্দ্রমোহনের রসগোল্লা আর পানতুয়ার সুনাম রয়েছে এ অঞ্চলজুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকেই আসেন মিষ্টির স্বাদ নিতে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির স্বাদ নিয়েছিলেন।

দোকানটি তত্ত্বাবধান করেন সঞ্জয় দে। তিনি জানান, ১৮৯০ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার ধূলসরা গ্রাম থেকে খুলনার বড় বাজারে আসেন তার দাদু কিশোর ইন্দ্রমোহন দে। সাহেবের বাজার তখন ব্যবসায়ী-বণিকদের ভিড়ে জমজমাট। ঘাট-বন্দরে নিয়মিত ভিড়ত পণ্যবাহী নৌকা-জাহাজ। ১৮৮২ সালে আলাদা জেলা হিসেবে ইংরেজদের প্রত্যক্ষ শাসনে চলে আসে খুলনা। বাড়তে থাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু বড় বাজারের গুরুত্ব। আর সেখানেই হেলাতলা রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে নিজেই মিষ্টি বানিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন ইন্দ্রমোহন। সেই থেকে শুরু। এর প্রায় শত বছর আগে নীলবাণিজ্য বিস্তারে খুলনা শহরে হাজির হয়েছিলেন চার্লস। খুলনা শহরে নিজের নীলকুঠি আর বাড়ি তো বানিয়েছিলেনই, সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য বানিয়ে ফেলেন একটি বাজারও। নিজের নামে নামকরণ করা চার্লির বাজার পরবর্তী সময়ে নাম পাল্টে হয় ‘চার্লি সাহেবের বাজার’, বা ‘সাহেবের বাজার’। পরবর্তী সময়ে এটাই হয় আজকের ‘বড় বাজার’। ইন্দ্রমোহনের রসগোল্লা, পানতুয়া ও গুড়ের সন্দেশের সুখ্যাতির কথা বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মহলে সাড়া ফেলে। রাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সব মহলে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির স্বাদ ও মানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিন মিষ্টির জন্য দোকানে ভিড়ও বাড়তে থাকে।

সঞ্জয় জানান, ২০১৯ সালের জুনে হেলাতলা রোডের ১০ নম্বর বাড়ির কিছুটা দূরে জামে মসজিদের পাশে ১৭ নম্বর হেলাতলা রোডের নিচতলায় দোকানটি স্থানান্তর করা হয়েছে। পুরোনো জায়গাটিতে প্রচুর ক্রেতা আসত। এখানেও আসে। শুরুতে রসগোল্লা, পানতুয়া, সন্দেশ, চমচম আর দানাদার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ইন্দ্রমোহন, যা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তার বংশধররা। প্রতিদিন ১২০-১৬০ কেজি দুধ সংগ্রহ করা হয়। আগে খুলনার তেরখাদা থেকে দুধ সংগ্রহ করা হতো। ফুলতলা আর ডুমুরিয়ার বাজারে গিয়েও দুধ সংগ্রহ করতেন দোকানের কর্মচারীরা। এখন খুলনা শহরের খামারগুলো থেকে চাহিদামতো দুধ পান তারা।

ইন্দ্রমোহন সুইটসের আরেকটি বিশেষত্ব হলো মিষ্টি তৈরি করা হয় দোকানের মধ্যেই, ক্রেতাদের চোখের সামনে। প্রতিদিনের মিষ্টি প্রতিদিনই বিক্রি হয়ে যায়। সন্দেশ ছাড়া বাকি সব মিষ্টিই বিক্রি হয় পিস হিসেবে। বড় আকারের পানতুয়া এবং রসগোল্লা বিক্রি হয় ২০ টাকায়, আর বাকি সব ছোট আকারের মিষ্টির দাম প্রতি পিস বিক্রি হয় ১০ টাকায়। শুরু থেকে কলাপাতাতেই এখানে মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। খেতে হয় হাত দিয়েই। এখন পানতুয়া আর রসগোল্লার রস যেন না পড়ে, সেজন্য একটি স্টিলের পিরিচের ওপর কলাপাতা রেখে পরিবেশন করা হয়। অন্য মিষ্টিগুলো কলাপাতাতেই পরিবেশন করা হয়।

৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইন্দ্রমোহন সুইটসে মিষ্টি তৈরি করেন কমল চন্দ্র সরকার। তিনি জানান, দোকানটি শুরুর দিকেই বরিশালের গৈলা থেকে খুলনার বড় বাজারে আসেন সুরেন দাশ। ইন্দ্রমোহন তাকে নিয়োগ দেন মিষ্টির কারিগর হিসেবে। ১৯৭২ সালে ইন্দ্রমোহন মারা যান, ব্যবসার হাল ধরেন তার ছেলে বেণীমাধব দে। ইন্দ্রমোহন দে আর সুরেন দাশের হাত ধরে তাদের পরবর্তী প্রজন্মও একইভাবে মিষ্টি তৈরি শিখেছে। বর্তমানে দোকানটি দেখাশোনা করেন বেণীমাধব দের ছেলে সঞ্জয় দে।

কমল বলেন, ‘মিষ্টি তৈরির বিশুদ্ধ উপকরণ আর পদ্ধতিই আমাদের সুখ্যাতি দিয়েছে। আমাদের বেশি মিষ্টি তৈরির লক্ষ্য কখনো থাকে না। শুরুর সময় থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ মিষ্টি তৈরি হতো, এখনো ঠিক সেই পরিমাণই মিষ্টি তৈরি হয়। মিষ্টি তৈরিতে আটা বা সুজির ব্যবহার হয় না। দুধ থেকে বানানো ছানা আর মিষ্টি জমাট বাঁধাতে সামান্য পরিমাণ ময়দা দেওয়া হয়। যে কারণে রসগোল্লা, পানতুয়া মোলায়েম ও স্বাদের হয়।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!