ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

মাইলস্টোন ট্রাজেডি

আগুনে পুড়ে গেছে সায়মার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ১২:৩১ এএম

পারিবারিক কবরস্থানে বাঁশঝাড়ের নিচে শায়িত হলো রাজধানীর উত্তরায় মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের নিহত ছাত্রী সায়মা আক্তার। গাজীপুর মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্ধা গ্রামের  কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শাহ আলমের মেয়ে সায়মা আক্তার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। 

বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখত শিশু সায়মা। এজন্য চাকরিজীবী বাবা তার মেধাবী মেয়েকে ভর্তি করেন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে। কিন্তু প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ট্রাজেডিতে আগুনে পুড়ে থেমে গেছে স্বপ্ন। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন  নিহতের বাবা, মা ও স্বজনরা। স্থানীয়রা বলছেন, পুরাতন বিমান দিয়ে আর প্রশিক্ষণ নয়, এমন নির্মম দুর্ঘটনা চান না তারা।

জানা যায়, দুর্ঘটনায় সায়মা মারা যাওয়ার পর তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজির পর রাত ৮টার দিকে সিএমএইচে তার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। স্বজনরা রাত ৩টার দিকে সায়মার মরদেহ নিয়ে আসেন গ্রামের বাড়িতে। মরদেহ গভীর রাতে গ্রামের বাড়িতে আনা হলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী সায়মা তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে উত্তরায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসবাস করত। দুর্ঘটনার দিন সকালে সায়মাকে অন্যান্য দিনের মতো তার মা লীনা আক্তার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। তার বাবা শাহ আলম বর্তমানে ফেনীতে চাকরি করেন প্রাণ-আরএফএল কোম্পানিতে।

এদিকে রাতে সায়মার লাশ তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর মহানগর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্ধা গ্রামে এসে পৌঁছালে এলাকায় এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিহতের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।  এ সময় স্থানীয়দের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে। খবর শুনে এলাকার শত শত মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় জমায়। প্রতিবেশীরা নিহতের স্বজনদের নানাভাবে সান্ত¡না দিতে থাকেন।

নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিপ্রবর্ধা এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে চাকরির সুবাদে থাকতেন রাজধানীর উত্তরায়। মেধাবী সায়মার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে মেয়েকে ভর্তি করেন মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে। গত তিনটি বছর সব কিছুই চলছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সোমবার প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে অন্ধকার নেমে আসে শাহ আলমের পরিবারে। বিমানের লেলিহান আগুনে মুহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সায়মার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।

নিহতের বাবা শাহ আলম বলেন, রোববার রাতে মেয়ে তার বুকে এসে তাকে চুমু খায়। সোমবার সকালে ঘুমের মধ্যে মেয়েকে রেখে অফিসের কাজে বরিশাল যান তিনি। এরপর মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পান। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দিনভর মেয়েকে খুঁজেছেন। পরে রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মর্গে পাওয়া যায় সায়মা ছোট্ট মরদেহ। এ সময় ছেলে সাব্বির তার বোনের মরদেহ শনাক্ত করে।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল সে ডাক্তার হবে। এখনতো সব শেষ। এজন্য আমি কাউকে দায়ী করি না, আমার কপালে নেই।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে লাশবাহী গাড়িতে সায়মার নিথর মৃতদেহ  পৌঁছে গাজীপুরের বিপ্রবর্ধা এলাকায়। এ সময় পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ। পরিবারকে সান্ত¡না দিতে ভিড় করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন নিহতের স্বজনরা। পরে সকাল ১১টায় নিহতের জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

শাহ আলমের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে সায়মা ছিল সবার ছোট। একই স্কুল থেকে সম্প্রতি এসএসসি পাস করেছেন তার বড় ছেলে সাব্বির হোসেন।