ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

সামরিক মর্যাদায় পাইলট তৌকিরকে শেষ বিদায় রাজশাহীর বাড়িতে দাফন

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ১২:৪৫ এএম

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরকে সামরিক মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুর্মিটোলা প্যারেড গ্রাউন্ডে তার ফিউনারেল প্যারেড ও জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধানসহ নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানাজা শেষে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তৌকিরের মরদেহের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন তার সহকর্মী বিমানবাহিনীর সদস্যরা। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান জানান, সরকারের পাশাপাশি বিমানবাহিনী আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকবে। সর্বোচ্চ সহযোগিতার জন্য যা করার তাই করা হবে। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজবে বিশ্বাসী না হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 
এর আগে গত সোমবার মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনের ওপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর পাইলট তৌকিরকে উদ্ধার করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ৭৬তম বিএএফএ কোর্স সম্পন্ন করে ৩৫ নম্বর স্কোয়াড্রনে কর্মরত ছিলেন। জানা যায়, ক্যাডেট অবস্থায় তিনি পিটি-৬ উড়োজাহাজে প্রথম ১০০ ঘণ্টা উড্ডয়নের প্রশিক্ষণ নেন। পরে ১৫ নম্বর স্কোয়াড্রনে প্রায় ৬০ ঘণ্টা উড্ডয়ন সম্পন্ন করে তিনি ৩৫ নম্বর স্কোয়াড্রনে যোগ দিয়েছিলেন।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্টকে শেষ বিদায় জানানোর পর তাকে রাজশাহী নগরের সপুরা গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় পুলিশ, সেনা ও বিমানবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ সেনা ও বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আত্মীয়স্বজন এবং সাধারণ মুসল্লিরা অংশ নেন।

জানাজার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনী পড়ে শোনানো হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম ও মামা মতিউর রহমান। তহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেই হতভাগ্য পিতা, যে নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছি।’ ডুকরে কেঁদে উঠে তিনি সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। পাশাপাশি মাইলস্টোন স্কুলের এ বিমান দুর্ঘটনায় শিশুসহ আরও যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সবার জন্যই দোয়া চান তহুরুল ইসলাম।

এর আগে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে তৌকিরের মরদেহ রাজশাহী সেনানিবাসে নেওয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩টা ২০ মিনিটে সেনানিবাসের পাশেই নগরের উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় তৌকিরের মরদেহ নেওয়া হয়। এ সময় অসংখ্য মানুষ বাড়ির সামনে ভিড় করেন। বাড়ির সামনে কিছু সময় মরদেহবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স রেখেই সেটি জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয় জানাজার জন্য।