জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এনসিপি সংস্কার, বিচার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে এগিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে সংস্কারের পক্ষে কাজ করছে। আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুক্তমঞ্চে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দেশ গড়তে ২৪তম দিনের মতো জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের জেলা পরিষদ সড়ক এলাকা থেকে শুরু হয় পদযাত্রা।
পদযাত্রাটি টিএ রোড, মসজিদ রোড, কুমারশীল মোড়সহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, সামান্তা শারমিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এতে এনসিপির নেতাকর্মী ছাড়াও অংশ নেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। পদযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে পৌর মুক্তমঞ্চে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সব সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কেবল জুলাই গণঅভ্যুত্থানই নয়, ২০২১ সালের মোদিবিরোধী দিল্লির আধিপত্যের বিরুদ্ধেও এই জেলার মানুষ নিজের রক্ত ও জীবন দিয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সবাইকে সতর্ক করে বলেন, সবাই ভেবেছিল ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে; কিন্তু দেখা গেল মাইলস্টোনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাকে পুঁজি করে আবারও আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হচ্ছে।
তিনি এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি দলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও রাজনীতির স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জিহান, দক্ষিণাঞ্চলীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ, এনসিপি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী আজিজুর রহমান লিটন, সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়কারী এস এম মহিউদ্দিন খানসহ জেলা ও উপজেলার নেতারা। সমাবেশ শেষে পদযাত্রার গাড়িবহর পার্শ্ববর্তী জেলা হবিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়।
অযোগ্যতা, অব্যবস্থাপনার ক্ল্যাসিক এক্সাম্পল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা: হাসনাত আবদুল্লাহ
একই অনুষ্ঠানে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা এই রাষ্ট্র আমাদের দেয় নাই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একটা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, একটা অযোগ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দিয়ে এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে কি কোনো ডাক্তার ছিল না? অযোগ্যতা, অব্যবস্থাপনার একটা ক্ল্যাসিক এক্সাম্পল (উদাহরণ) সেট করে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার মধ্য দিয়ে।’
ঢাকায় উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের অতীতের শাসকেরা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা দিয়ে গেছে। আপনি রাস্তায় বের হন, আপনি বাসে চাপা পড়ে মরবেন। আপনি হসপিটালে যান, চিকিৎসার অভাবে মারা যাবেন। আপনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাবেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা যাবেন। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা এই রাষ্ট্র আমাদের দেয় নাই। আমরা একটা স্বাভাবকি মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই।’
সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য আমরা যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো দিয়েছি, এই সংস্কার প্রস্তাবের আশু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। এর আগে দৃশ্যমান বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আপার হাউসে অবশ্যই পিআর নিশ্চিত করতে হবে।’