রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে বিএনপি সচেতনভাবে সামনের দিকে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা অত্যন্ত সচেতন যে, জনগণের যেটা প্রয়োজন এবং কালের সঙ্গে, যুগের সঙ্গে যেসব পরিবর্তন আনা দরকার, রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেতন। সচেতনভাবেই আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি। গতকাল রোববার দুপুরে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র উদ্যোগে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে ‘ফারাক্কা ব্যারাজ ও বাংলাদেশের সংকট: পদ্মা ব্যারাজ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর আবশ্যিকতা নিয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী শহিদুল ইমাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উত্তরায় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীসহ পাইলট তৌকির ইসলামের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকে আজকাল অনেক কথা বলছেন, সংস্কার হচ্ছে। সংস্কার তো আমরা অনেক আগে থেকেই উপলব্ধি করেছি। ২০১৬ সালে আমরা প্রথম ভিশন-২০৩০ দিয়েছি, যেখানে আমাদের সব পরিবর্তনের কথা, সংস্কারের কথা প্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি। আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান ৩১ দফা দেন, যে ৩১ দফাই আজকে কিন্তু সব সংস্কারবিষয়ক যে কমিটিগুলো হয়েছে সেখানে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সবকিছুই নির্ভর করবে মানুষের ওপরে। আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, আমরা তারও আগে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করেছি, ঊনসত্তরে আন্দোলন করেছি এবং সবশেষে গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছেছি। গত জুলাই-আগস্ট মাসে একটা ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে আমরা সরাতে সক্ষম হয়েছি। সুতরাং আমরা পারি, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি আমরা পারি এবং আমার বিশ্বাস আগামীতেও আমরা পারব।
তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি এইটুকু বুঝি, আমার দেশের মানুষের পালস সেটা আমি বুঝি। আমার দেশের মানুষ উপরে উঠতে চায়, উন্নতি চায়। জনগণ একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায় এবং সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কিন্তু সব বিষয়ের সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।
ফ্যাসিস্ট সরকার পতনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল তাকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই জাতীয় ঐক্যকে সামনে নিয়ে আমরা যদি সবাই আমাদের মূল বিষয়গুলোকে সামনে আনতে পারি, সেগুলো নিয়ে যদি কাজ করি এবং আমাদের মধ্যে সেই ঐক্য যদি থাকে- তাহলে আমরা সফল হবো।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে আছে। শুধু রাজনৈতিক কাঠামোর বিষয় নয়, আমাদের আগামীর রাজনীতির পথ চলার বৈশিষ্ট্য কী হবে সেটাই এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ, কেউ বলে ৩৭ শতাংশ মানুষ-জমি প্রকটভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সবাই বুঝি কী হয়েছে? আমি প্রত্যাশা করছি, আগামী বছর নতুন সরকার আসলে একটা যথোপযুক্ত বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষাকারী গঙ্গা চুক্তির নিশ্চয়তা পাব।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, গঙ্গা ব্যারাজ না হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভবিষ্যৎ খুব খারাপ অবস্থায় যাবে। আপনারা নিজের দেশটাকে কতটুকু জানেন? জানেন না। সাতক্ষীরা-খুলনা-বাগেরহাট-বরগুনার দক্ষিণাংশে এরই মধ্যে জনসংখ্যা গ্রোথ নেগেটিভ। মানুষ ওখান থেকে পালাচ্ছে? কারণ সেটা বসবাসযোগ্য নেই।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। এতে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান, সাবেক প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন, পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর হোসেন খান জালাল প্রমুখ।