সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
অন্যদিকে যেসব চিকিৎসক বাধা উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সত্যিকারের নায়ক বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে, আন্দোলনে আহতদের সেবা দেওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানে আয়োজিত ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। সর্বশক্তি দিয়ে আমরা দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ করব’।
৪০ মিনিটব্যাপী এই বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে শুল্ক আলোচনা, সন্ত্রাসবাদ এবং নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টা ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি তাঁর সরকারের পূর্ণ সমর্থন জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই রূপান্তর আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পাবে।
জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া কমিশনের অগ্রগতির বিষয়টিও প্রধান উপদেষ্টা এ সময় তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, কমিশন খুবই ভালো কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজ (গতকাল) যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, বাংলাদেশের কনট্রা-টেররিজম কার্যক্রম, নির্বাচন প্রস্তুতি এবং ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ নিয়ে আলোচনা হয়।
তিনি আরও জানান, আমাদের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। ট্যারিফবিষয়ক আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি, সেটি ভালোভাবে সম্পন্ন হবে। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি দলও যাচ্ছে, যদিও তারা আলোচনায় থাকবেন না।
অন্যদিকে শাহবাগের অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধের সময়ও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ হয় নাÑ এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অথচ জুলাই বিপ্লবের দিনগুলোতে বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম দেখিয়েছে। আন্দোলনের সময় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও হুমকি চলেছে। তারপরও যারা আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন, তাঁরাই জুলাইয়ের সত্যিকারের নায়ক।
চিকিৎসকদের মানবিক অবদানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই বাধা উপেক্ষা করে কিছু চিকিৎসক আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপনারাই এই জুলাইয়ের অন্যতম নায়ক। আপনারা সাহস এবং দায়িত্ববোধের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই দুঃসময়ে আপনারা যে সেবা দিয়েছেন, তা আমরা কোনোদিন ভুলব না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার এ দেশের ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেন কোনো হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা না হয়। কিন্তু জুলাইয়ের আমাদের কিছু চিকিৎসক যোদ্ধাদের গল্প যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সেবার গল্পকেও হার মানায়।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও চিকিৎসকদের সাহসিকতার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা যেমন নজিরবিহীন ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন, তেমনি আপনাদের পরিবারগুলোকেও এক ধরনের আতঙ্ক ও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবুও পাহাড়সম বাধা অতিক্রম করে মানুষকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, আহতদের জন্য রক্তের সংকট থাকলেও চিকিৎসকরা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে রক্ত সংগ্রহ করেছেন, ওষুধ সরবরাহ করেছেন, এমনকি রোগীর পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে ভিন্ন নাম এবং রোগ লিখে পুলিশ থেকে আড়াল করেছেন। অনেকে বেসরকারি চিকিৎসক হয়ে নিজ উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। আপনারা শুধু সেবা দেননি, দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :