তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রÑ উত্তরাঞ্চলের তিন নদীর মিলনস্থলে বিস্তৃত ৬৪ কিলোমিটারের চকচকে বাঁধ এখন শুধুই একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প নয়; বরং সামান্য সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে এটি হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন এলাকা। গাইবান্ধার চারটি উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া এ বাঁধ ঘিরে প্রতিদিন জড়ো হয় শত শত মানুষ।
সকালের নির্মল হাওয়া কিংবা বিকেলের নরম আলো, সবই যেন আমন্ত্রণ জানায় নদীতীরের এই শান্ত দৃশ্যপটে।
গাইবান্ধা শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বালাসীঘাট এখন কেবল একটি নদীবন্দর নয়, বরং হয়ে উঠছে মানুষের মিলনমেলা। ব্রহ্মপুত্র নদীর ডান তীরে গড়ে ওঠা এই বাঁধ প্রকল্পে রয়েছে সিমেন্টের বোল্ডার, সবুজ ঘাসের গালিচা ও বিস্তীর্ণ জনপদ। ছুটির দিন তো বটেই, কর্মদিবসেও ভিড় লেগেই থাকে। নারীরা আসেন, শিশুরা দৌড়ায়, তরুণরা আড্ডা দেয়Ñ সবমিলিয়ে একটি জমজমাট সামাজিক বিনোদন কেন্দ্র।
এখানে দুই মৌসুম, দুই রূপ: বর্ষায় নদী ভরা যৌবন নিয়ে কুল ছাপিয়ে চলে। তখন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাÑ লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা থেকে শত শত নৌকায় বয়ে আনে ধান, পাটসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য। অন্যদিকে শীত বা শুকনো মৌসুমে চর জেগে ওঠে, দেখা মেলে বালুচর, চরের জীবিকা আর পাথরের মতো অবিচল মানুষদের। দুই মৌসুমের দুই রকম রূপই মানুষকে টানে।
এখানে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএর গেস্ট হাউস, ট্রাক টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। শুধু বসার জায়গা, শিশুদের দোলনা, স্পিডবোটে নদী ভ্রমণ, নিরাপদ রিসোর্ট কিংবা চরভ্রমণের ব্যবস্থা থাকলে জায়গাটি হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০ টাকায় গাইবান্ধা শহর থেকে অটোতে এসে এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করা যায়। নদীর টাটকা মাছ, চরের সরল আতিথেয়তা আর সবুজের সমারোহ দেখলে মন ভরে যায়।’
এই বিশাল নদীতীরজুড়ে গড়ে উঠতে পারে চরের কৃষিপণ্য বিক্রির হাট, হস্তশিল্প কেন্দ্র, ভ্রমণ ব্যবসা। চরাঞ্চলের নিঃস্ব পরিবারগুলোর জীবিকা হতে পারে পর্যটননির্ভর।
জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহম্মদ বলেন, ‘বালাসীঘাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে ভালো ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে এটি পর্যটন নগরীতে রূপান্তর করতে আমরা সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করব।’
স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা চাই বালাসীঘাট ও আশপাশের চরের জীবনযাত্রাকে ঘিরে একটা পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। সেখানে আছে পাহাড়ের দৃশ্য, নৌকাভ্রমণ, হাটবাজার, খাঁটি বাংলার প্রতিচ্ছবি।’