- ১০ লাখ নারী ও শিশু অনাহারে: জাতিসংঘ
- ৯৪ শিশুসহ ১৮১ জনের মৃত্যু
- ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৯৪ জন নিহত
- যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পকে ইসরায়েলি সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের চিঠি
- হামলা বন্ধ হলে ইসরায়েলি জিম্মিদের ত্রাণ সহায়তা দেবে হামাস
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ১০ লাখ নারী ও কন্যাশিশু অনাহারে আছে। এতে অঞ্চলটিতে চরম মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর সংবাদ সংস্থা মেহের’র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ১০ লাখ নারী ও কন্যাশিশু অনাহারে রয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য এবং এর অবসান হওয়া উচিত।
প্রেস টিভি অনুসারে, জাতিসংঘ সব নারী ও কন্যাশিশুদের জীবন রক্ষাকারী সাহায্য পৌঁছে দেওয়া, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এর আগে গত রোববার গাজায় আরও সাহায্য প্রবেশের জন্য বিমান হামলায় আংশিক বিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। ব্যাপক অনাহার এবং অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক নিন্দার পর এ পদক্ষেপ নেয় তেল আবিব। তবে, মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, উপকূলীয় ছিটমহলে সাহায্য অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। পর্যাপ্ত খাদ্যের সরবরাহ না হলে অনাহারে মৃত্যু আরও বাড়বে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাগুলো।
বিশ^ব্যাপী ক্ষুধা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) নিশ্চিত করেছে, গাজার কিছু অংশে, বিশেষ করে গাজা শহরে দুর্ভিক্ষের সীমা অতিক্রম করেছে। এই পরিস্থিতিকে অবরুদ্ধ উপত্যকার ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে আইপিসি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছর গাজায় ৭৪টি অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর মধ্যে ৬৩টিই ঘটেছে শুধু জুলাই মাসে, যার মধ্যে ৩৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং পাঁচ বছরের কম বয়সি ২৪ জন শিশু রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, অনাহারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৯৩টিই শিশু। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ‘অনাহার’কে বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক শিশুও রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের ফলে অনাহারে এখন পর্যন্ত মোট ১৮১ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৯৪ জনই শিশু। খবর আলজাজিরার।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলাও অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকে চালানো হামলায় কমপক্ষে ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতেও হামলা চলছে। আল-আওদা হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল-সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৭ জন ত্রাণপ্রার্থী নিহত এবং আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। জরুরি ও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, রাফাহ শহরের উপকণ্ঠে জিএইচএফের আরেকটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে এক নারীসহ আরও দুজন নিহত এবং ২০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গত সপ্তাহে ইসরায়েল কিছু এলাকায় ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা কমেনি। বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার অনুমতি দিলেও মানবিক সংস্থাগুলো এটিকে অপ্রতুল বলে অভিহিত করেছে এবং স্থলপথে নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহের ওপর জোর দিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন বেশ কয়েকজন সাবেক গোয়েন্দাপ্রধানসহ ইসরায়েলি ৬০০ অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তারা ট্রাম্পকে পাঠানো বিশেষ বার্তায় লেখেন, তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তিনি যেন ইসরায়েল প্রশাসনকে চাপ দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। বিশেষ বার্তায় সাবেক এই ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেন, ‘আমরা পেশাগতভাবে যা বুঝতে পারছি তা হচ্ছে, হামাস এখন আর ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত কোনো হুমকি নয়। ইসরায়েলিদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে আপনার (ট্রাম্প) বিশ্বাসযোগ্যতা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষমতার নামান্তর। এ কারণে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করুন, জিম্মিদের ফিরিয়ে দিন, দুর্ভোগ বন্ধ করুন।’
এদিকে গাজায় বিমান হামলা বন্ধ হলে জিম্মিদের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হামাস। একই সঙ্গে গাজায় স্থায়ী মানবিক করিডর বানানোরও দাবি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির। এদিকে হামাসের প্রকাশিত ভিডিওতে জিম্মিদের করুণ দশা দেখে তাদের মুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকারের কথা জানান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। যেকোনো মূল্যে তাদের ফিরিয়ে আনার কথাও বলেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :