ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্মৃতির পাতায় ঠাঁই হচ্ছে  হাতে বোনা তাঁতের

নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

একসময় নরসিংদীর গ্রামীণ জনপদে মাকুরের ঠকঠক শব্দে মুখর হতো ঘরবাড়ি। হাতে টানা তাঁত ছিল মানুষের জীবনের অংশ। প্রতিটি ছিটে ও সুতা মিলিয়ে তৈরি হতো বাংলার খ্যাতনামা সুতি কাপড়। কিন্তু আজ সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। হাতে বোনা তাঁতের জায়গা নিয়েছে পাওয়ার লুম ও বিদ্যুৎচালিত তাঁত। নরসিংদীর গ্রামগুলোয় এখন শুধু স্মৃতি আর ছবি মিলিয়ে এই শিল্পের চিহ্ন দেখা যায়।

নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী ও শেখেরচর বাবুরহাট, রায়পুরা উপজেলার রাধাগঞ্জ, মনিপুরা ও হাসনাবাদে একসময় স্থানীয় তাঁতিদের সমাগম হতো। তাঁতপল্লি ও বাজারগুলো ছিল প্রাণবন্ত। গ্রামবাসীরা হাতে বোনা শাড়ি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, দরজার পর্দা, মোটা খদ্দর ও গামছা তৈরিতে নিয়োজিত থাকতেন। তবে এখন সেই বাজারগুলো পরিত্যক্ত, তাঁতশিল্প বিলুপ্তির মুখে।

রসুলপুর গ্রামের স্থানীয় তাঁতশিল্পী রূপ মিয়া বলেন, ‘একসময় প্রতিটি ঘরে তাঁত ছিল। আমাদের ইউনিয়ন তাঁতের জন্য পরিচিত ছিল। এখন মাত্র ১০-১৫টি পরিবারের মধ্যে হাতে বোনা তাঁত বাঁচে, তা-ও শুধু গামছা তৈরিতে। অন্য সময়ের নিলিক্ষার শাড়ি, যা না হলে মেয়েদের বিয়ে হতো না, এখন আর কদর নেই।’

৫০ বছর ধরে হস্তচালিত তাঁতে কাপড় বোনায় অভিজ্ঞ আবু কালাম বলেন, ‘আগে শাড়ি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর বানাতাম। এখন শুধু গামছা। বাজার থেকে সুতা এনে প্রসেস করে বানাই। একটি গামছার খরচ ১২৫ টাকা, বিক্রি করি ১৫০ টাকায়। দিনে ৮-১০টি গামছা বানাতে পারি।’

বিসিক নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম খান জানান, ‘রায়পুরার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নে বিসিকের একটি টিম পরিদর্শন করেছে। ১০টি পরিবারের তাঁতশিল্পকে বিসিকের আওতায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের আধুনিকায়ন ও বাজার সম্প্রসারণের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অল্প সুদে ঋণও দিয়ে থাকি।’

তবে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় মূলধন, ঋণ, রং, সুতা ও বাজারজাতকরণের অভাব এবং শক্তিচালিত তাঁত ও পাওয়ার লুমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় এই প্রাচীন হস্তচালিত তাঁতশিল্প ক্রমশ বিলুপ্তির পথে।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতের এই অবস্থা শুধু নরসিংদী নয়, দেশের বহু অঞ্চলের জন্যও চিন্তার বিষয়। এক সময়ের চিরায়ত শিল্প আজ হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ছায়ায়, আর নতুন প্রজন্ম শুধু বই ও ছবিতেই তা দেখছে।