ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

অযত্ন-অবহেলায় প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক ভিটা

কলিট তালুকদার, পাবনা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১২:০০ এএম

বাংলাসাহিত্যে চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ২ সেপ্টেম্বর। পাবনায় তার পৈতৃক ভিটাটি দখলমুক্ত হলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আজও অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে। শেষ চি‎হ্ন জমিদারবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক মন্দিরটি থেকে খসে পড়ছে ইট, সুড়কি। সেখানে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলা হলেও অর্থাভাবে তা প্রায় বন্ধের পথে।  

বাংলাসাহিত্যে যার অবদান তুলনাহীন, যার অবদান নতুনত্বে ঘুরিয়ে দিয়েছে বাংলাসাহিত্যের গতিপথ, তিনি হলেন বাংলা সাহিত্যের মহান পুরুষ প্রমথ চৌধুরী। যার নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়। সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ছিল বীরবল। বিভিন্ন তথ্য মতে, কবি প্রমথনাথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আর ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।  

বাবা দুর্গাদাস ছিলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামের জমিদার। সেই জমিদারি আজ না থাকলেও রয়েছে বিশাল শানবাঁধানো পুকুরঘাট আর জমি। রয়েছে বসতভিটার পারিবারিক মন্দির। তবে তার পৈতৃক ভিটায় গেলে প্রথমেই যে কেউ হোঁচট খেতে পারেন। বিশাল ফাঁকা জমি। চার পাশ জাল দিয়ে ঘেরা দেওয়া। প্রমথ চৌধুরীর স্মৃতিচিহ্ন বলতে কিছুই নেই। থাকার মধ্যে রয়েছে শানবাঁধানো পুকুর ও এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে পারিবারিক মন্দিরটি। 

২০১৭ সালের আগে এই চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। হরিপুরের চৌধুরীপাড়া প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক ভিটেয় ৩ একর জমির ওপর এলাকার ১৮টি পরিবার দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করত এক প্রভাবশালী দখলদারের ছত্রছায়ায়। সে সময় প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আন্দোলন ও দাবির মুখে প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করে। উপজেলা প্রশাসনের সাথে প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান সফল হয়। দখলদারদের হাত থেকে এই সাহিত্যিকের জায়গা উদ্ধার করে এক কোণায় নির্মাণ করা হয় একটি পাঠাগার। সেই পাঠাগারের অবস্থাও এখন করুণ। 

পাঠাগারটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা এলাকার যুবক সেলিম রেজা বলেন, তিন বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিন পাঠাগারটি খোলেন ও বন্ধ করেন। তেমন পাঠক আসে না। পাঠক না আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, চার চালা ঘরটিতে নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা, নেই তেমন আসবাবপত্র। এক সময় প্রতিদিন পাঠাগারে দৈনিক পত্রিকা রাখা হতো। অর্থাভাবে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সে কারণে পাঠাগারে পাঠক আসে না। এলাকাবাসী ফরিদ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে এই মহান ব্যক্তির জন্মবার্ষিকী পালন করেছি এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, এই যে বিশাল জায়গা রয়েছে সেটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে জায়গাটা রক্ষার দাবি তাদের। 

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক ভিটাটি আরও দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি অচিরেই বাস্তবায়ন হবে। বাংলা সাহিত্যে যার অবদান ভুলবার নয়, সে সাহিত্যিকের পৈতৃক ভিটাটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।