ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

৪ গোলে ইতিহাসে কলম্বিয়ার সুয়ারেজ

একই দিনে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার হার

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০২:১১ এএম

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষটা জয়ে রাঙিয়ে দিতে পারল না আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসিকে ছাড়া ইকুয়েডরের মাঠে খেলতে গিয়ে ১-০ গোলে হেরেছে বিশ^ চ্যাম্পিয়নরা। একই দিন নিজেদের ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চমক দিয়েছে বলিভিয়া। অপর ম্যাচে ৪ গোল করে কলম্বিয়ার সুয়ারেজ ইতিহাসের পাতায় নাম তুলেছেন। তার নৈপুণ্যে কলম্বিয়া ৬-২ গোলে হারায় ভেনেজুয়েলাকে।

দুই লাল কার্ড ও পেনাল্টির ম্যাচে মেসি ছিলেন বিশ্রামে। সর্বশেষ ভেনেজুয়েলা ম্যাচের একাদশে পাঁচ পরিবর্তন এনে শেষটা ভালো করার চেষ্টা করেছিলেন স্কালোনি। কিন্তু ৩১ মিনিটে অধিনায়ক নিকোলাস ওতামেন্দির লাল কার্ড দেখা এবং প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ের ১৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ইকুয়েডর ফরোয়ার্ড এনের ভ্যালেন্সিয়ার গোলে হারের তেতো স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। তবে বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে চিন্তা নেই আর্জেন্টিনার। সেটা নিশ্চিত হয়েছে আগেই। ১৮ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের তালিকায় শীর্ষে থেকে এবারের বিশ্বকাপ বাছাই শেষ করল স্কালোনির দল। সমান ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে আগেই বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পায় ইকুয়েডর।

পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। ডান প্রান্ত থেকে ভেসে আসা পাস আর্জেন্টিনার বক্সে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নিকোলাস তালিয়াফিকো ও ইকুয়েডর ডিফেন্ডার অ্যাঞ্জেলো প্রিসিয়াদো। দুজনেই লাফ দিয়েছিলেন শূন্যে। আর্জেন্টিনার লেফট ব্যাক তালিয়াফিকোর কনুই গিয়ে লেগেছে প্রিসিয়াদোর মুখে। ভিডিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, সেটা ইচ্ছাকৃত ছিল না। কলম্বিয়ান রেফারি উইলমার রোলদানও ফাউলের বাঁশি বাজাননি।

কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) জানিয়ে দেয় ওটা পেনাল্টি! সোজাসুজি শটে আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন ভ্যালেন্সিয়া। খেলা শুরুর প্রথম ১৫ মিনিটে দুটি পরিষ্কার গোলের সুযোগ পেয়েছে ইকুয়েডর। মার্তিনেজের দৃঢ়তায় একবার রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। একটু সময় নিয়ে খেলা গুছিয়ে নিলেও গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। প্রথমার্ধে ইকুয়েডরের পোস্টে লাওতারো মার্তিনেজ, জুলিয়ানো সিমিওনে ও নিকোলাস গঞ্জালেসরা কোনো শট রাখতে পারেননি।

৫০ মিনিটে ইকুয়েডর মিডফিল্ডার ময়জেস কাইসেদো লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর খেলাটা দশজন বনাম দশজনের সমতায় ফেরে। নিকোলাস গঞ্জালেসকে অবৈধ ট্যাকল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কাইসেদো। গ্যালারি থেকে তা দেখে নিশ্চয়ই ভালো লাগেনি কাইসেদোর মা কারমেন কোরোজোর! এই ম্যাচে আমন্ত্রিত হয়ে আসা কোরোজোর কাছ থেকে ম্যাচের বল নিয়েই খেলা শুরু করেন রেফারি।

ইকুয়েডর ফরোয়ার্ড ভ্যালেন্সিয়া ও নিলসন আঙ্গুলা প্রথমার্ধে তিনটি শট করেন আর্জেন্টিনার পোস্টে। এই অর্ধে মাত্র ৪০ শতাংশ বল দখলে রাখা আর্জেন্টিনা বিরতির পর তুলনামূলক ভালো খেলেছে। মাঝমাঠে দাপটের সঙ্গে খেলে বক্সে ঢুকেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই অর্ধেও ইকুয়েডরের পোস্টে শট নিতে পারেননি আর্জেন্টিনার কেউ! গোটা ম্যাচে আর্জেন্টিনার ৮টি শট নেওয়ার বিপরীতে ইকুয়েডর শট নিয়েছে ১১টি, এর মধ্যে ৪টি পোস্টে ছিল।

২০০৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়েই বলিভিয়ায় ৬-১ গোলে হারের সেই বিপর্যয়ের পর এই প্রথম কোনো ম্যাচে লাল কার্ডের সঙ্গে পেনাল্টি হজম করল আর্জেন্টিনা। পরিস্থিতি পাল্টাতে ৬০ মিনিটের পর লিয়ান্দ্রো পারেদেস, মার্তিনেজ ও রদ্রিগো দি পলকে তুলে ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো, হুলিয়ান আলভারেজ ও জিওভান্নি লো সেলসোকে বদলি নামান কোচ স্কালোনি।

এদিকে, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে ব্রাজিলকে হারিয়ে সপ্তম হয়ে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে বলিভিয়া। ৪২ শতাংশের কিছু বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২৩ শট নেয় বলিভিয়া, এর ১০টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে বল দখলে এগিয়ে থাকা ব্রাজিল গোলের জন্য ১০ শট নিয়ে কেবল তিনটি রাখতে পারে লক্ষ্যে। ব্রাজিলের খেলায় না ছিল চেনা ধার, না ছিল গতি। এল আলতোর উচ্চতার জন্য নিজেদের স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারেনি কোচ কার্লো আনচেলত্তির দল। শেষের স্নায়ুক্ষয়ী সময়টুকু কোনোমতে কাটিয়ে দিয়ে জয়ের হাসিতে মাঠ ছাড়ে বলিভিয়া। ঘরের মাঠে দুবার এগিয়ে যাওয়ার পরও কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৬-৩ গোলে হেরেছে ভেনেজুয়েলা।

লুইস সুয়ারেসের হ্যাটট্রিকে স্বপ্ন ভেঙেছে লাতিন আমেরিকা থেকে কখনো বিশ্বকাপে খেলতে না পারা একমাত্র দেশটির। লাতিন আমেরিকার বাছাইপর্ব শেষে ২০ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম বলিভিয়া। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম ভেনেজুয়েলা। ব্রাজিলের মতো হার দিয়ে বাছাইপর্ব শেষ করেছে আর্জেন্টিনা। শেষ রাউন্ডে কলম্বিয়ার মতো জয় পেয়েছে একুয়েডর। অন্য দুই ম্যাচে ড্র করেছে উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। প্রথম ছয়টি স্থানে আছে আগেই সরাসরি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেওয়া আর্জেন্টিনা (৩৮), একুয়েডর (২৯), কলম্বিয়া (২৮), উরুগুয়ে (২৮), ব্রাজিল (২৮) ও প্যারাগুয়ে (২৮)।