ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

৫ দফা দাবিতে জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন এবং সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। কর্মসূচিতে তারা সরকারের প্রতি দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়। এতে পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় সমাবেশে বক্তব্য দেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভকারী দলের মধ্যে ছিলÑ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা।

সমাবেশ থেকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি দিয়ে তার ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের সব নোট অব ডিসেন্টের বিষয় একত্র করে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হবে। নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে হবে, নতুবা দেশ মহাদুর্যোগের দিকে যাবে। বিদ্যমান কাঠামোয় নির্বাচন হলে নতুন ‘হাসিনা’ তৈরি হতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘কিছু দল জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পরের সরকারের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, যা গণআকাক্সক্ষার বিরোধী।’ এ ছাড়া তিনি গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিচার দাবি করেন। 

এর আগে জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে গণসমাবেশ করেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মাদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ পিআর পদ্ধতির পক্ষে। আমাদের রাজপথে আন্দোলনের আগ্রহ নেই। বিএনপি যদি জনতার ওপর আস্থা রাখে, তাহলে পিআরে তাদের সমস্যা কী? পিআর পদ্ধতি নিয়ে ‘গণভোট’  দিতে হবে প্রয়োজনে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় হয়ে পুনরায় বায়তুল মোকাররমে গিয়ে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাউয়ুম, মুফতি রেজাউল করীম আবরার, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, কে এম শরীয়াতুল্লাহ, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাকি, মাওলানা খলিলুর রহমানসহ কেন্দ্র ও মহানগর নেতারা। বিকেলে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এবং জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে অন্যান্য দলের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে, বিক্ষোভের কারণে পল্টন, সচিবালয়, মতিঝিল, গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, বিজয় সরণিসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে যানবাহন থেকে নেমে অনেকে গন্তব্যে যান হেঁটে।  বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কর্মসূচি, ফলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায় সাধারণ মানুষের।

গুলিস্তান জিপিও মোড়ে আকাশ পরিবহনের চালকের সহকারী মো. আলাল বলেন, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি গেট থেকে গাড়ি ছাড়ার পর রাস্তায় তেমন যানজট পাইনি। তবে গুলিস্তান থেকে ব্যাপক যানজট শুরু হয়েছে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে পুরানা পল্টন মোড় পার হতে। বিক্ষোভ কর্মসূচির মিছিল চলাকালীন পুরানা পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়সহ  দুই পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

বিক্ষোভ থেকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে যে দাবি জানানো হয়Ñ জুলাই সনদ কার্যকর; রাষ্ট্রের সংস্কার; পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও অভ্যুত্থানে শহিদদের হত্যার দ্রুত বিচার কার্যক্রম। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে বলে জানায় জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন।