- ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে আরব-ইসলামি দেশ ও পশ্চিমারা
- পর্যালোচনা করছে হামাস, না মানলে হামাসকে করুণ পরিণতির হুঁশিয়ারি
- কাতারে হামলার জন্য ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু
- মঙ্গলবারও গাজায় ইসরায়েল ৩৭ জনকে হত্যা করেছে
গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে জল্পনার শেষ হলো। একটি প্রস্তাব প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। বলা হচ্ছে, এ প্রস্তাবে হামাস ও ইসরায়েল রাজি হওয়া মাত্রই যুদ্ধ বন্ধ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে তারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। ইসরায়েল এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, হামাস এতে রাজি না হলে গাজায় ইসরায়েল যা করতে চায়, তাতেই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে।
ফিলিস্তিনের গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের নতুন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে নানামুখী পদক্ষেপের মধ্যেই ইসরায়েল বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজা শহরে প্রয়োজনীয় প্রতিটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে পানির অবকাঠামো, শিক্ষা এবং আশ্রয় কোনো কিছুই আর স্বাভাবিক নেই। শ্রেণিকক্ষ বা খেলার মাঠে থাকার পরিবর্তে শিশুরা বিমান হামলা থেকে পালিয়ে ফিরছে। তারা অনাহারে মারা যাচ্ছে। এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে গত সোমবার বৈঠক করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এর আগে রোববার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, গাজা শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তার দাবি, এ চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর শান্তির পথ খুলে যাবে। অক্সিওস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা শহরে ইসরায়েলি আক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে গত পাঁচ দিনে উত্তর থেকে দক্ষিণ গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে। গত আগস্টের মাঝামাঝি থেকে গাজা শহরের প্রায় চার লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছে, অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে তারা ‘সৎভাবে’ প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে। তবে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) একে ‘অঞ্চলকে বিস্ফোরিত করার রেসিপি’ বলে অভিহিত করেছে। খবর আলজাজিরার।
পশ্চিম তীরে শাসনরত পিএ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা গাজা যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত, বন্দিদের মুক্তি ও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আহ্বান জানায়। পিআইজে বলেছে, এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া আগ্রাসনের নতুন রূপ, যা অঞ্চলকে আবারও আগুনে জ্বালিয়ে দেবে। মিশর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেন, পরিকল্পনাটি যুদ্ধের অবসান, গাজা পুনর্গঠন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি রোধ এবং পূর্ণ ইসরায়েলি প্রত্যাহারের পথ প্রশস্ত করবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ট্রাম্পের নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘গাজায় রক্তপাত বন্ধ ও একটি ন্যায্য ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা প্রস্তাবে বেশকিছু অস্পষ্ট ধারা রয়েছে, যা ফিলিস্তিন ও সমগ্র অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে ট্রাম্প এ পরিকল্পনাকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অস্পষ্ট এবং বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে কাতারে বিমান হামলার জন্য অনুতপ্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আবদুল রহমান আল থানির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কাতারে আর কখনো হামলা করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি নেতানিয়াহুর এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন তিনি। আর হামাসের সঙ্গে আলোচনা করবে আরব ও মুসলিম দেশগুলো। এ ছাড়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি চেয়েছেন তিনি। গাজায় ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ এবং বন্দি ফিলিস্তিনিদের ছাড়তে বলা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী ধাপে ধাপে গাজা ছাড়ার আশ্বাস রয়েছে পরিকল্পনায়।
এদিকে ফিলিস্তিনিরা এখনো ট্রাম্পের এ পরিকল্পনার সাফল্য নিয়ে সন্দিহান বলে জানিয়েছেন আলজাজিরা গাজা প্রতিনিধি তারেক আবু আজউম। তিনি বলেন, অনেক ফিলিস্তিনি বিশ্বাস করেন, হামাসকে সামরিকীকরণমুক্ত করা ও উৎখাত করা সংক্রান্ত বর্তমান দাবিগুলো হয়তো প্রত্যাখ্যান করা হবে। তবু তারা আশা রাখেন, যেকোনোভাবেই হোক ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।
ওয়াশিংটন ডিসির ‘ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ’-এর ফেলো ফিলিস বেনিস আলজাজিরাকে বলেন, এখানে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষিত হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বেনিসের মতে, জিম্মিদের ফিরে পাওয়ার পর ইসরায়েল যে আবারও যুদ্ধে ফিরে যাবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, তাদের নানা অজুহাত দেখানোর সুযোগ থেকে যাচ্ছে। তখন তারা ট্রাম্পকে বলতে পারে, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমরা যে ধরনের সহযোগিতা আশা করেছিলাম, তা পাচ্ছি না, তাই আবার যুদ্ধে ফিরতে হবে। এর জন্য দুঃখিত।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন