বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিন্মচাপটি দুর্বল হয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও ওডিশার দিকে চলে গেছে। তবে এর প্রভাবে গতকাল শুক্রবার সকালেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝোড়ো বাতাসসহ ভারি থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। এমন বৃষ্টি আরও পাঁচ দিন চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকাসহ দেশের ১০ জেলায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এসব জেলার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে গভীর এই নি¤œচাপের প্রভাবে নদ-নদীর পানি বেড়ে দেশের পাঁচটি জেলার নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই পাঁচ জেলা হলোÑ লালমনিরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা।
গতকাল আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানার স্বাক্ষর করা এক বার্তায় বলা হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ইতিমধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্লাবিত হয়েছে উপকূলের অনেক এলাকা। এরই মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি কয়েকশ পরিবার চরম দুর্ভোগে রয়েছে। নি¤œচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখানো হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এটি ওড়িশা ও আশপাশের এলাকায় স্থল নি¤œচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হয়েছে।
আজ শনিবার রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামীকাল রোববার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
সোমবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।
মঙ্গলবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।
নদ-নদীর পানি বাড়ছে : গভীর নি¤œচাপের প্রভাবে ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ফেনী জেলার মুহুরী, সিলোনিয়া ও ফেনী নদীর পানি বেড়ে নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে লালমনিরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে উজানে ভারতে উল্লেখযোগ্য ভারি বৃষ্টিপাত হয়নি। আগামী তিন দিন রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলায় এবং সংলগ্ন উজানে ভারতের প্রদেশগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীর পানির সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে; ধরলা নদীর পানির সমতল কমলেও দুধকুমার নদের পানির সমতল স্থিতিশীল আছে। এসব নদীর পানির সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। এ সময় তিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী ও ভুগাই নদীর পানির সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে; কংস নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে। এসব নদীর পানির সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। এ সময় সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস নদ-নদী শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলায় সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। এ ছাড়া রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের করতোয়া, যমুনেশ্বরী, পুনর্ভবা, টাঙ্গন নদীর পানির সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে; আত্রাই, আপার-আত্রাই, মহানন্দা ও ঘাঘট নদ-নদীর পানির সমতল কমেছে। এসব নদীর পানির সমতল আগামী তিন দিন দ্রুত বাড়তে পারে। বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের থেকে উঁচু জোয়ার হচ্ছে, যা আগামী এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, নজরুলপাড়া ও কোনাপাড়া এলাকায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্বীপের একমাত্র স্লুইচগেট বন্ধ করে দেওয়ায় পানি জমে আছে, নামতে পারছে না। সমুদ্র উত্তাল থাকায় দুই দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে।