একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে দুর্গাপূজার ছুটির সঙ্গে ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। দুই মিলিয়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সড়কগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। ব্যস্ত নগরী ছিল শান্ত-নিরিবিলি। গণপরিবহন ও প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে রিকশা-অটোরিকশার আধিক্য কম থাকায় ছিল না যানজটের সেই চিরচেনা রূপ। ভিড় ছিল না মেট্রো রেলের স্টেশনেও। থেমে থেমে বৃষ্টি আর পূজার ছুটিতে উচ্চবিত্তরা ভালো সময় কাটালেও বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ। পথে মানুষ না থাকায় কমেছে তাদের রোজগার।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। যানজটের অন্যতম সড়ক হিসেবে পরিচিত বাড্ডা-রামপুরা সড়ক। চিরচেনা জ্যামের রাস্তায় ছিটেফোঁটাও জ্যাম ছিল না। রামপুরা ব্রিজ থেকে বসুন্ধরা, অপরদিক মালিবাগ-মৌচাকে অনায়াসেই যাওয়া যাচ্ছে। এই রাস্তায় গণপরিবহনের সঙ্গে রিকশা ও অটোরিকশাও কম চোখে পড়েছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর ছুটির কারণে লোকজনের চলাচলও কম লক্ষ করা গেছে।
রামপুরা বিটিভির সামনে কলিংয়ের জন্য অপেক্ষমাণ উবার প্রাইভেট কারচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই রাস্তায় লোকজন কম। লম্বা ছুটির কারণে লোকজন গ্রামের বাড়িতে গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টি হচ্ছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেরও হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ঈদের সময় ঢাকার রাস্তা যেমন ফাঁকা দেখা যায়, এখন ঠিক তেমনি মনে হচ্ছে। তবে ঢাকার রাস্তা ফাঁকা থাকলেও মহাসড়কে জ্যাম রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তায় লোকজন কম থাকার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো ট্রিপ হয়নি। ট্রিপের জন্য অপেক্ষা করছি।
মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ির পাশের দায়ের দোকানি লতিফের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার টাকার ব্যবসা হতো। কিন্তু আজ (গতকাল) এখন পর্যন্ত ৫০০ টাকার ব্যবসাও হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের ছয়জন সদস্য। প্রতিদিনের আয় দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু মাঝে মাঝে বড় ছুটি বা বৃষ্টি শুরু হলে ঝামেলায় পড়তে হয়। কারণ এসব দিনে যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে সপ্তাহের শেষে কিস্তি দিতে ঝামেলায় পড়তে হয়।
মিরপুর-১১ এলাকার রিকশাচালক আনিস মিয়া জানান, বৃষ্টি হলেই মানুষ এখন কম বের হয়। এতে পরিবারের জন্য চিন্তা হয়। কারণ, দিন শেষে রিকশার জমার টাকা দিতে হয়। জমার টাকা দেওয়ার পর নিজের পরিবারের জন্য জিনিসপত্র কিনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে মোট ভাড়া হয়েছে ৬০০ টাকার মতো। এর বেশির ভাগই রিকশার জমা বাবদ দিতে হয়েছে। এদিকে অসুস্থ মেয়েটার জন্য ফলমূল কেনার উপায় নাই। কারণ বাজারে গেলে চাল, ডিম ও মসলা কিনতে টাকা শেষ। তার মধ্যে আবার কিছু ওষুধপত্রও কিনতে হয়েছে।’
ফেরিওয়ালা আলিম ইসলাম বলেন, ‘মিরপুর এলাকায় ঘুরে ঘুরে চানাচুর, বাদাম বিক্রি করে প্রায় হাজার টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু গত দুই দিন ধরে তেমন ব্যবসা হচ্ছে না। আগের চেয়ে হাঁটতেছি বেশি তবে কেনার লোক নাই।’
ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে বসে থাকা ইলিয়াস হোসেনের মুখেও বিষণœতার ছাপ। তিনি বলেন, প্রতিদিন কিছু টাকা আয় হতো, যা দিয়ে অন্তত খেয়ে-পরে থাকতে পারতাম। কিন্তু আজ (গতকাল) সারা দিনে যা হয়েছে, তা দিয়ে আমি এক বেলাও খেতে পারব না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, শ্যামলী, মহাখালী, উত্তরা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীÑ এসব রাস্তার অবস্থা একই রকম। গণপরিবহন কমের পাশাপাশি প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা অটোরিকশা কম। অনেকটাই ফাঁকা এসব এলাকার রাস্তা।
রামপুরা ব্রিজে উত্তরায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী আরিফ জানান, তিনি তার এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রতিদিন এই রাস্তায় ভিক্টর, আকাশ কিংবা অনাবিল হরহামেশাই পাওয়া যেত। আর আজ (গতকাল) ১০ মিনিটের বেশি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঈদের মতো ছুটি পড়েছে। এ কারণে রাস্তায় যেমন মানুষ কম, তেমনি যানবাহনও কম। প্রসঙ্গত, দুর্গাপূজার কারণে গত বুধবার থেকে ছুটি শুরু হয়েছে। টানা চার দিনের ছুটি পাওয়ায় রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়িতে গেছেন অনেকে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে টানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে লোকজনও বের হচ্ছে না। এ কারণে রাস্তায় যেমন মানুষ কম, তেমনি যানবাহন চলাচলও কমে গেছে।