ঢাকা রবিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন সালাহউদ্দিন আহমেদ

বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

‘কোনো রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে আমরা কোনো দিন মাথা নত করতে পারি না’Ñ এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যেকোনো একটা আইনানুগ বৈধ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করার কোনো অধিকার আমাদের কারও নেই। তাহলে পরে এমন একটি পরিস্থিতির নজির সৃষ্টি হবে, যে নজিরটা আগামী দুই বছর পরে, পাঁচ বছর পরে, বারবার কোনো না কোনো দাবির মুখে পড়বে যে এইভাবে এই প্রক্রিয়ায় আবার সংবিধান পরিবর্তন করেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের জুলাই সনদ ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এই মন্তব্য করেন। 

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যারা পিআর-পিআর করছে, তাদের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলের অনেকে আমি-ডামির নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের সব কর্মকা-ে বাতাস করেছে।’

‘রাষ্ট্র কোনো ছেলেখেলা নয়’ মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না। এই রাষ্ট্রকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে দিতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে আমরা কোনো দিন মাথা নত করতে পারি না। জনগণই হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক। আসুন আমরা তাদের কাছে যাই।

রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গণতান্ত্রিক উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এনডিপি। 

সভায় জুলাই সনদ সম্পর্কে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনে একই দিনে আরেকটা ব্যালেটের মাধ্যমে গণভোটের। সেই রায়টা নেওয়া যাবে যে এই সংস্কারের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের কাছে আমরা যারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি, সব রাজনৈতিক দল সেই প্রতিশ্রুতির পক্ষে আছে কি না, সেই সনদের পক্ষে জনগণ আছে কি না। ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলুন।

তিনি বলেন, যদি জনগণ ‘হ্যাঁ’ বলে, তাহলে সেই পার্লামেন্ট সেই নির্বাচিত সংসদের প্রত্যেক সংসদ সদস্য আইনানুগভাবে ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হবেন এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য। তারা বাধ্য থাকবেন সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য। আমরা সেই প্রক্রিয়ার কথা বলেছি। 

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, যখন সংবিধান ছিল না, দেশে যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হয়েছিল, বাংলাদেশের ওপরে যখন যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখনকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই ভূখ-ের জন্য গণপরিষদ গঠন করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন। সেখানেই জনগণের সামনে তারা বললেন, তারা গণপরিষদ গঠন করলেন। তারাও রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ গঠনের জন্য এখতিয়ার দিলেন এবং তারা জনগণের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যারা আজ পিআর পিআর করছে, তাদের উদ্দেশে শুধু বলি, যে কয়টা রাজনৈতিক দল নিয়ে আপনারা মাঠে এ সমস্ত বক্তব্য দিচ্ছেন, তারা কারা? তাদের ২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে কী ভূমিকা ছিল? আমরা জানি, আপনাদের অন্তর্ভুক্ত একটি রাজনৈতিক দল নাম নেব না। আপনারা নাম খুঁজে বের করবেন। তারা ৭ জানুয়ারির ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তারা আপনাদের দোসর হয় কীভাবে আন্দোলনে?”

তিনি বলেন, যারা বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাতাস করেছে আওয়ামী লীগের সমস্ত কর্মকা-ে, তারা আপনাদের আন্দোলনের শরিক হয় কীভাবে? বাংলাদেশের মানুষ তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। আমরা মনে করি, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য আপনাদের কোনো আন্দোলন করা সঠিক হবে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পিআর মানে আমি অনেক সময় বলেছি, এটা পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস। এটা স্থায়ীভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রে। পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে এটা এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, সেই সমস্ত দেশের নজির আপনারা দেখুন। আপনারা খুব সম্প্রতি দেখবেন নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সেখানেও পিআর বিদ্যমান, কখনো স্থায়ী সরকারব্যবস্থা থাকে না, স্থিতিশীল সরকারব্যবস্থা থাকে না। দুই মাস, ছয় মাস, পাঁচ মাস, এক বছর পরে সেই সমস্ত জায়গায় খালি প্রধানমন্ত্রী চেঞ্জ হয়, সরকার চেঞ্জ হয়, কোনো প্রত্যাশা-জনপ্রত্যাশা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা কি জানেন, পিআর পদ্ধতিতে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর জায়গা আছে? আপনারা যে কেউ যদি কোনো নির্বাচনি এলাকার মধ্যে কেউ একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে চান, তার জন্য পিআর পদ্ধতিতে তো কোনো খানা নাই। তারা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সাংবিধানিক অধিকার রাখে না? আমরা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে এবং নির্বাচনে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য এবং পারতপক্ষে বানচাল করার জন্য যে শক্তি কাজ করে, তার পক্ষেই এই রাজনৈতিক দলটি কাজ করছে বলে আমাদের সন্দেহ। কারণ বাংলাদেশে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদের উৎপাত হবে আবার।’

এনডিপির সভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুনের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব জামিল আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গণদলের এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, জনতার অধিকার পার্টির তরিকুল ইসলাম, ন্যাপের আবদুল বারেক, এনডিপির আওলাদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।