ঢাকা শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫

ট্রাইবু্যুনালে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

কর্মসূচি প্রত্যাহার না হলে সমন্বয়কদের হত্যার নির্দেশ  দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১২:২৮ এএম

জুলাই আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে সব সমন্বয়ককে তথা আন্দোলনকারীদের হত্যা করার নির্দেশ ছিল শেখ হাসিনার। আন্দোলনে গুম, অপহরণ হওয়ার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এমনটা বলেই আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে এই তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। 

গত বছরের ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি সাক্ষ্য দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দেন এই উপদেষ্টা। আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত এ মামলার বিচারকাজ মুলতবি করা হয়েছে।

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়া বলেন, “আমি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ছিলাম। আন্দোলনের একপর্যায়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে যোগাযোগ শুরু করে। ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার সময় আমাদের বারবার বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের সেখানে আনা হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবেÑ এমন নির্দেশ রয়েছে। তবে তারা (ডিবি) দয়া করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।”

চানখাঁরপুলের হতাহতের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “ওই দিন আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন। পরে জানতে পারি, সেখানে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শর্টগান ব্যবহার করে। সেদিন বেলা দেড়টার দিকে আমরা জানতে পারি, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।”

এই হত্যাকা-ের জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবে০০০০০০০০০০ক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, গুলি চালানো পুলিশ সদস্য ও কমান্ড কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া বলেন, রাষ্ট্রীয় নানা স্থাপনায় নিজেরাই আগুন দিয়ে তাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে ফ্যাসিস্ট সরকার। তিনি আরও বলেন, গুম করে জোর করে প্যাথেড্রিন ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে রাখা হয় তাকে। জুলাইতে নির্মমতার বর্ণনা তুলে ধরে পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাসহ জুলাই গণহত্যার সাথে জড়িত প্রত্যেকের বিচার দাবি করেন তিনি। 

গুমে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু বিচার বিভাগের জন্য মাইলফলক উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান এই উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগের বিচার শুরুর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ায়ও খুশি তিনি। এ ছাড়া পলাতক শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগও সাক্ষ্য দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেন আসিফ।