- তালেবান সরকারের দাবি, অভিযানে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত ও আহত হয়েছেন ৩০ জন
- নিজেদের ২৩ সেনা সদস্য নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। দুইশরও বেশি তালেবান নিহতের দাবি
- তালেবান সরকারের উসকানিমূলক কর্মকা-ের কড়া জবাবের হুঁশিয়ারি পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাতে দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে রয়টার্স। সংঘর্ষের পর গতকাল রোববার আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তপথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। এদিকে এ সংঘর্ষে ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও আসল সংখ্য নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। কাবুল দাবি করেছে, তাদের অভিযানে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। অন্যদিকে সংঘর্ষকালে আফগান সীমান্তের ১৯টি ফাঁড়ি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে ইসলামাবাদ। এ ছাড়া সীমান্তজুড়ে সংঘটিত সংঘর্ষে ২০০ জনেরও বেশি তালেবান এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নিহত এবং পাকিস্তানের ২৩ জন সেনা সদস্য নিহত এবং আরও ২৯ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এদিকে সীমান্তে সংঘাতের জন্য আফগানিস্তানকেই দায়ী করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ প্রতিবেশী দেশটির তালেবান সরকারের উসকানিমূলক কর্মকা-ের কড়া জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের বিমান হামলার অভিযোগ তুলে তালেবান সরকার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। তারই প্রেক্ষাপটে গত শনিবার রাতে দুই দেশের সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
ইসলামাবাদ ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি; বরং তারা অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে; যারা ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। নয়াদিল্লি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর তালেবান জানিয়েছে, তারা তাদের ভূখ- অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয় না।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ গতকাল জানান, পাকিস্তানের বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র আফগান বাহিনীর হাতে এসেছে। অভিযানে ২০ জনের বেশি তালেবান সেনা হতাহত হয়েছেন। এ ছাড়া তালেবান কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কুনার ও হেলমান্দ প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে তিনটি ফাঁড়ি দখল করেছে।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি শনিবার রাতে এক্সে এক পোস্টে জানান, আফগানিস্তানের ভূখ-ে বারবার পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘন ও বিমান হামলার জবাবে তালেবান সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়েছে। অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, দেশটির সেনারা ১৯টি আফগান সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করেছেন। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে বলা হয়, এসব ফাঁড়িতে থাকা আফগান যোদ্ধারা হয় নিহত হয়েছেন, নয় পালিয়েছেন।
পাকিস্তান টেলিভিশনে (পিটিভি) সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, কুররাম অঞ্চলে আফগান সীমান্ত ফাঁড়িগুলোয় আগুন জ্বলছে। কয়েকজন আফগান সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন বলে সেখানে দাবি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে রেডিও পাকিস্তান গতকাল জানায়, পাকিস্তানি বাহিনী তালেবানের মানোজবা ক্যাম্প ব্যাটালিয়ন সদর, জান্দুসার ফাঁড়ি, তুর্কমেনজাই ক্যাম্প ও খারচার ফোর্ট ধ্বংস করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমটি আরও বলে, সীমান্তের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটিতে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির দাবি, বেসামরিক জনগণের ওপর আফগান বাহিনী গুলিবর্ষণ করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আফগানিস্তান বিনা উসকানিতে এ হামলা করেছে। পাকিস্তানের সাহসী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকরভাবে এর জবাব দিয়েছে। কোনো ধরনের উসকানি সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখার (আইএসপিআর) বরাত দিয়ে গতকাল আলজাজিরা জানিয়েছে, সীমান্তজুড়ে সংঘটিত সংঘর্ষে ২০০ জনেরও বেশি তালেবান এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানের ২৩ জন সেনা সদস্য নিহত এবং আরও ২৯ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা বিশ্বস্ত গোয়েন্দা এবং ক্ষয়ক্ষতি যাচাইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহতদের সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। তারা আরও যোগ করেছে, সীমান্তের অঞ্চলজুড়েই তালেবানের চৌকি, ক্যাম্প, সদর দপ্তর এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা নিশ্চিত করেছে, আফগানিস্তান সীমান্তের সঙ্গে রাতের সংঘর্ষে তাদের ২৩ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২৯ জন সেনা সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।
এদিকে সীমান্তে সংঘাতের জন্য আফগানিস্তানকেই দায়ী করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। প্রতিবেশী দেশটির তালেবান সরকারের ‘উসকানিমূলক কর্মকা-’-এর ‘কড়া’ জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গতকাল এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেন।
সীমান্তে দুই দেশের গোলাগুলির পর গতকাল আফগানিস্তানের সঙ্গে থাকা মূল দুটি সীমান্ত ক্রসিং তোরখাম ও চমন বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। তুলনামূলক ছোটগুলোর মধ্যে খারলাচি, আঙ্গর আড্ডা ও গুলাম খান ক্রসিংও বন্ধ করা হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের তালেবান প্রশাসনই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে ইসলামাবাদ অভিযোগ করলেও কাবুল তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপস হবে না। কড়া ও কার্যকরভাবে প্রতিটি উসকানির জবাব দেওয়া হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন