ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

টাইফয়েড টিকা ৮১ শতাংশের বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম

দেশে প্রথমবারের মতো শিশুদের বিনা মূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে পাকিস্তান ও নেপালে শিশুদের এই টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নেপালে এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে ২০ হাজার শিশুর মধ্যে একটি গবেষণা চালানো হয়। বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করে।

প্রকাশিত এই গবেষণার ফলে বলা হয়, টিকাটি প্রথম বছরে ৮১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৭৯ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ‘টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)’ নামের এই টিকা ৯ মাস বয়সি শিশু থেকে শুরু করে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত সবার জন্য নিরাপদ। টিকা দেওয়ার পর সামান্য জ্বর বা ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা ছাড়া বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি।

টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা মূলত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০১৯ সালের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যায়। আক্রান্তদের একটি বড় অংশই শিশু ও কিশোর বয়সী।

গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান ঢাকায় প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ২০২১ সালে দেশে ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৮ হাজার, এদের ৬৮ শতাংশ ছিল শিশু। দেশে টাইফয়েডের প্রকোপ বিষয়ে ধারাবাহিক তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যান না থাকলেও অনুমান করা হচ্ছে এটি বাড়ছে।

ল্যানসেটের গবেষণায় বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে টাইফয়েডের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি পাকিস্তানে সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট টাইফয়েড ছড়িয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে টাইফয়েড থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হতে পারে ভ্যাকসিন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেপালের পাটান অ্যাকাডেমি অব হেলথ সায়েন্সেসের গবেষকরা যৌথভাবে নেপালের ললিতপুর মেট্রোপলিটন শহরে যৌথভাবে এই গবেষণা চালান। এতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সি সুস্থ প্রায় ২০,০১৪ জন শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিশুদের দৈবচয়নের ভিত্তিতে দুটি দলে ভাগ করা হয়।

একটি দলকে ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনালের তৈরি টাইফয়েড কনজুগেট টিকা (টিসিভি) দেওয়া হয়। অন্য দলটিকে দেওয়া হয় মেনিনজাইটিস ‘এ’ রোগের টিকা। টিকা দেওয়ার পর প্রায় এক বছর ধরে সব শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখা হয়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া টাইফয়েড রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে দুই দলের মধ্যে তুলনা করা হয়। গবেষণার ফলে দেখা যায়, যারা টাইফয়েড কনজুগেট টিকা (টিসিভি) পেয়েছিল, তাদের মধ্যে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার হার নাটকীয়ভাবে কম।

যে দলটি টিসিভি টিকা পেয়েছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ৭ জনের টাইফয়েড শনাক্ত হয়। বিপরীতে মেনিনজাইটিস টিকা পাওয়া কনট্রোল গ্রুপের মধ্যে ৩৪ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, এই টিকার কার্যকারিতা ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ, টিকাটি টাইফয়েড হওয়ার ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনে।

টাইফয়েড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : টিকা দেওয়ার পর কিছু মৃদু ও সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। টিসিভি টিকা পাওয়া শিশুদের মধ্যে ৯ শতাংশের সামান্য জ্বর এসেছিল। এ ছাড়া ইনজেকশনের জায়গায় হালকা ব্যথা, ফোলাভাব বা লাল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও দেখা যায়। তবে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই এসব উপসর্গ সেরে যায়। এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইতিমধ্যে টাইফয়েডপ্রবণ দেশগুলোকে তাদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে টিসিভি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।