বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০১:০৭ এএম

এবার আলোচনার টেবিলে সিলেট-৫

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০১:০৭ এএম

এবার আলোচনার টেবিলে সিলেট-৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবকিছু ছাপিয়ে এবার আলোচনার টেবিলে উঠে এসেছে সংসদীয় আসন সিলেট-৫। কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপি শূন্য রেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সমঝোতার কারণে এ আসন অন্য দলের জন্য ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। এ জন্যই সিলেটের অন্য আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও তারা সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ আসনে কোনো প্রার্থীর নাম দেয়নি। সিলেট-৪ আসনে নিজেদের দলের ভেতর থেকে প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। এটি যেমন বিএনপির ভেতরে প্রায় নিশ্চিত, তেমনি সিলেট-৫ আসন সমমনা কোনো দলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতে পারেÑ এমনটিও মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখনো পর্যন্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে সমর্থন দেওয়া হতে পারেÑ এরকম একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোনো দলই এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কিছু বলেনি।

এদিকে এই আসনে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন সিলেটের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, পিরে কামেল, শামসুল উলামা মরহুম আল্লামা ফুলতলী সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানে আল ইসলাহ বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা হুসামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। তিনি আল্লামা ফুলতলীর ছোট সাহেবজাদা। গত সংসদ নির্বাচনে হুসাম চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সিলেট-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওই সংসদে একমাত্র আলেম ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া সেই নির্বাচনে তাকে জয়ী করতে তার আসনের কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসাসহ সর্বস্তরের উলামায়ে কেরাম সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের শেষ আমলের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হওয়ায় বিরোধী পক্ষের কাছে বেশ সমালোচিত হন। যদিও তিনি ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি তার দল ও ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে তালামিযে ইসলামিয়া গণঅভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। তালামিযের একাধিক নেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বেও ছিলেন।

তিনি তার আসনে বেশ জনপ্রিয়। এমনকি সিলেটের সব আসনেও রয়েছে তাদের বিশাল ভোট ব্যাংক। জামায়াতে ইসলামীবিরোধী ভোটব্যাংক হওয়ায় সব সময়ই ফুলতলীর পির আল্লামা ফুলতলীর (রহ.) অনুসারীর ভোট গিয়ে পড়ে জামায়াত এন্টি বলয়ে। তাদের সমর্থন সিলেটে ভোটের হিসাব-নিকাশ অনেক সহজ করে দেয় বলে প্রত্যেক দলই ফুলতলী অনুসারীদের সমিহ করে চলে। তা ছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, নেজামে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটসহ সব দলের একটি উল্লেখ্যযোগ্যসংখ্যক অনুসারী আল্লামা ফুলতলী (রহ.)-এর মুরিদ, না হয় ভক্ত। সে জন্য প্রতিটি দলেরই ফুলতলী পরিবার ও তাদের প্রতি একটি সফট কর্নার কাজ করে।

রাজনৈতিক একটি পর্যবেক্ষক সূত্র জানায়, প্রার্থী হওয়ার মতো একাধিক যোগ্য ব্যক্তি থাকার পরও সিলেট-৫ আসনে প্রার্থী না দেওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করেছে। এর মধ্যে একটি ফুলতলী মসলক বা তাদের অনুসারীদের খুশি রাখা। সেখানে জমিয়তের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে সমর্থন দিলেও ফিল্ড তারা ছেড়ে দিতে পারে। এমনকি প্রাকশ্যেও ফুলতলীর সাহেবজাদাকে এ আসনে সমর্থন দিলেও দিতে পারে। সিলেটের ছয়টি বিভাগে জামায়াতকে মোকাবিলার জন্য বিএনপি যে কৌশল অনুসরণ করছে, তার একটি ফুলতলী মসলককে হাতে নিয়ে আসা। তারা জানে, জামায়াত চেষ্টা করলেও সিলেট অঞ্চলে ফুলতলী (রহ.)-এর অনুসারীদের সমর্থন পাবে না। বিএনপি এখানে ছাড় না দিলে ভোটের মাঠে জয়ী হয়ে আসা কষ্টকর হতে পারে। এই মেসেজ গিয়েছে দলের প্রধান নীতিনির্ধারক তারেক রহমানের কাছেও। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেক রহমানের নির্দেশেই মাস দেড়েক আগে সিলেট নগরীর সুবহানিঘাটের বাসভবনে গিয়ে ফুলতলীর বর্তমান গদিনশীন পির ও আল্লামা ফুলতলী (রহ.)-এর বড় সাহেবজাদা আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরীর দোয়া নিয়ে এসেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতাসহ দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর এক সিনিয়র সদস্য।

ওই সময় এবং পরবর্তী সময়ে আল ইসলাহের কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপি নেতাদের। যুক্তরাজ্যেও উভয় দলের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। আগামী নির্বাচনে সিলেটের ১৯ আসনে বিএনপিকে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। দু-একটি আসনে প্রার্থী দিলে সেখানে বিএনপি ছাড় দেবে এমন কথাও আলোচনা হয়। এর মধ্যে সিলেট-৫, মৌলভীবাজার-২ উল্লেখযোগ্য। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে প্রার্থী হতে পারেন কুলাউড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আনজুমানে আল ইসলাহের নেতা মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ। এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এখানেই তার বাড়ি। এ দুই আসন ছাড়াও সিলেটে আরও দুটি আসনে প্রার্থী দিতে পারে আল ইসলাহ। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারা বাজার) আসনে ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থী উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী প্রচারণাও শুরু করেছেন। দলটি সিলেটের মোট চার আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে।

রাজনৈতিক সূত্র জানায়, সিলেট-৫ আসনে হুসামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী প্রার্থী হলে ওবায়দুল্লাহ ফারুকের জন্য সেটি মহাকাল হয়ে দাঁড়াবে। জামায়াতের প্রার্থী এখানে জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান। এ আসন থেকে একবার জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে আসনে তাদের ভোট ব্যাংক খুব একটা শক্ত নয়। বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে আওয়ামী লীগের। আছে জাতীয় পার্টিরও একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠী। আর রয়েছে কওমি ও ফুলতলী মসলকের ভোট ব্যাংক। নির্বাচনে মাওলানা হুসামুদ্দীন চৌধুরী এবং একই সঙ্গে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক প্রার্থী হলে জয়ের পাল্লা ভারী থাকবে মাওলানা হুসামুদ্দীনের দিকে। কেননা, সেখানে কওমি ভোট ব্যাংকেও রয়েছে নিজেদের একাধিক গ্রুপ। খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনও এ আসনে প্রার্থী দিতে পারে। ইতিমধ্যে খেলাফত মজলিস তাদের প্রবাসী এক প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছে। সবাই নির্বাচনে এলে তাদের ভোট ব্যাংক ভেঙে যাবে। সে ক্ষেত্রে লাভের পাল্লা ভারী হতে পারে হুসামুদ্দীন চৌধুরীর। কেননা, বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় তার প্রভাব ফেলবে ভোটের মাঠে। বিএনপি যদি প্রকাশ্যে ওবায়দুল্লাহ ফারুককে সমর্থন দেয়, তাহলে তাদের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। তাদের ভোট গিয়ে পড়বে অন্য বাক্সে। তবে বিএনপির সেই ভোট নানা কারণে এবার জামায়াতের পাল্লায় যাবে না। তারা সে ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন হুসামুদ্দীন চৌধুরীকে। আর নির্বাচনে না আসা আওয়ামী লীগের বিশাল ভোট ব্যাংকের অনেকে ভোট থেকে বিরত থাকলেও একটি বড় অংশ ভোটে আসতে পারে। তবে তারা বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থীকে সেই ভোট দেবে না। এমনকি জাপাও তাদের ভোট ব্যাংক তখন ঢেলে দিতে পারে মাওলানা হুসামুদ্দীন চৌধুরীর ব্যালটে।

এবার নির্বাচনে প্রার্থী দেবে কি না বা নিজে সিলেট-৫ আসনে প্রার্থী হবেন কি নাÑ এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে দলের সভাপতি মাওলানা হুসামুদ্দীন চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার দলের নেতারা সরাসরি এখনো কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না। তবে তারা নির্বাচনে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। দলের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আবু সালেহ কুতবুল আলম বলেন, সিলেট-৫ আসনে মাওলানা হুসামুদ্দীন চৌধুরী প্রার্থী হবেন এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেকে চাইছেন, তিনি যেন প্রার্থী হন। তবে তার এখনো কোনো আগ্রহ নেই। সিলেটের বাকি অনেক আসনে অবশ্য জন-আকাক্সক্ষা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আছে আল ইসলাহের প্রার্থীর দিকে। আমরাও তাই ভাবছি। অনেক আসনে প্রার্থীরা নির্বাচন করতেও চাইছেন। আমরা আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। তিনি জানান, সিলেটে ফুলতলী মসলক ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। অনেকে মনে করেনও। আর এটিই সঠিক। এ জন্যই রাজনৈতিক দলগুলো ফুলতলীর ভোট ব্যাংকের প্রত্যাশী হয়। রাজনৈতিক কোনো আসন সমঝোতা হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কাদের সমর্থন দেব। অনেক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!