বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী যেটা বলছে ওটাই না কি করতে হবে; ওটা না করলে না কি ভোট হবে না। ভাই, ভোটকে এত ভয় পাচ্ছ কেন? কারণ তুমি জানো যে ভোট হলে তোমার অস্তিত্ব থাকবে না। এই কারণে তোমরা ভোটকে এত ভয় পাও, নির্বাচনকে এত ভয় পাও। গতকাল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কে কে বাড়ি লক্ষ্মীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামী ‘মুনাফেকি’ করে, তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে বলে মির্জা ফখরুল বলেন, বেহেশতের টিকিট আল্লাহ ছাড়া কেউ দিতে পারে না। জামায়াত ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। সুতরাং যারা এসব মুনাফেকি কাজ করে, তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা দল খুব জোরেশোরে বাংলাদেশে প্রচার করছে, তারাই একমাত্র দেশপ্রেমিক দল। তারাই সৎ ও সঠিক দল। আমাদের মা-বোনদের কাছে গিয়ে বলছে, ‘বেহেশতের’ টিকিটও নাকি তারা দিচ্ছে!
বেহেশতের টিকিট তো আল্লাহ, নবী ছাড়া কেউ দিতে পারবে না। আমি যদি ঠিকমতো ইসলাম ধর্ম পালন করি তাহলে বেহেশতে যাওয়ার চিন্তা করতে পারি। দেওয়া না দেওয়ার ইচ্ছা তো আল্লাহর, তাই না। এগুলো যারা করতেছে, তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এসবে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, আমার কর্মেই হবে আমার বেহেশত। আমার কাজের মধ্য দিয়ে বেহেশতে যাব অথবা যাব না। আমি যদি মানুষকে ভালোবাসি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, আমি যদি রোজা রাখি, মিথ্যা কথা না বলি; সুদ না খাই তাহলে আমার বেহেশতে যাওয়ার একটা পথ তৈরি হবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামের টিকিট কাটলে বেহেশতে যেতে পারবে, না হলে পারবে না, এটা কি আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে? এ কারণে আমি বলছি, যারা এ রকম মুনাফেকি কাজ করে তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
দেশে একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করব। অর্থাৎ আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব। জনগণ ভোটের মাধ্যমে একটা পার্লামেন্ট গঠন করবে, একটা সরকার গঠন করবে এবং তারা দেশ চালাবে। একটা সুযোগ আসছে, সঠিক মানুষকে ভোট দিয়ে, সঠিক দলকে ভোট দিয়ে, পার্লামেন্টে পাঠানোর। যারা আমাদের কাজ করবে, জনগণের কাজ করবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, দীর্ঘ ৯ মাস আপনি যে সংস্কারের নাম করে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বললেন এবং অনেকগুলো বিষয়ে একমত হলেন। আপনি একমতের বাইরে গায়ের জোরে দেশের ওপর কোনো কিছু যদি চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে সব দায়-দায়িত্ব আপনাদের। দেশের মানুষ তা গ্রহণ করবে না।
ভোটে পিআর পদ্ধতির দাবি নিয়ে সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জামায়াত বলছে, পিআর করতে হবে, না হলে ভোট হবে না। ভাই ভোটকে এত ভয় পাচ্ছ কেন? কারণ তোমরা জানো ভোট হলে তোমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। এ কারণে জামায়াত ভোটকে এত ভয় পায়। এনসিপির উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সন্তানেরা ভালো কাজ করছে, ৫ আগস্টে আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদেরকে মুক্ত করেছে। আমাদের সাহায্য করেছে। এখন এরাও একটা রাজনৈতিক দল করছে, যার নাম এনসিপি। কিন্তু তাদের কোথাও খুঁজে পাই না। এই এলাকায় একটাও এনসিপি নাই। তাহলে ভোটটা কেমন করে হবে? ভোটটা হবে কীভাবে, ওরা কোনো ভোট পাবে না। এনসিপির নেতারা জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পিআর দিতে হবে, সনদ আগে দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করা। ভোট পেছানো এবং আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যেগুলোতে আমরা একমত হয়েছি, বিএনপি শুধু সেগুলোতেই একমত থাকবে। অন্য কোনো কিছুর দায় বিএনপি নেবে না। এই দায় সরকারকে নিতে হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিজের জীবনের শেষ নির্বাচন বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, শেষ বয়সে আপনাদের কাছে বিনীত আবেদন, এবার আমাকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে আপনাদের কাজ করার সুযোগ করে দেবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন